ইনসাইড বাংলাদেশ

ভারতের নাগরিকত্ব আইন: বাংলাদেশে যে প্রভাব পড়বে


প্রকাশ: 12/03/2024


Thumbnail

অবশেষে ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হয়েছে। চার বছর আগে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন করার উদ্যোগ নিলে সারা ভারত জুড়ে বিক্ষোভ হয়। সেই সময় এই আইন কার্যকর করা স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু আইনটি পাস হওয়ার চার বছর পর গতকাল এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়ে গেল। লোকসভার ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। 

গত চার বছর ধরেই নিয়ম করে আইনের নিয়ম বিধি তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সময় বাড়ি আসছিল। ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার এই আইন পাশ করেছিল। আইনে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে যে সমস্ত হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, নিপীড়ন নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন এই আইনে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আইনটি সারা ভারতে চালু করা হচ্ছে। 

প্রশ্ন উঠছে যে, এই আইনের ফলে বাংলাদেশ কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা বা বাংলাদেশে এই আইনের কোনো প্রভাব পড়বে কিনা? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করার সময় স্থানীয় এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনি এটাও বলেছিলেন, আমরা বুঝতে পারছি না, ভারত কেন এটা করল? এই আইনে কোন প্রয়োজনই ছিল না। 

এরকম একটি আইন করার ফলে বাংলাদেশের ওপর কোন রকম প্রভাব পড়বে কিনা বা কোন রকম নেতিবাচক মনোভাব হবে কিনা সেটি নিয়ে কোন কোন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। আইনটিতে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলই সরকার ক্ষমতায় ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান, এরপর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ৯ বছর, এরপর বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি, আওয়ামী লীগ আবার বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং অবশেষে ১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব পালন করেছিল।

ভারতের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে যে সমস্ত সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের কারণে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ভারতে এই সময়ে কতজন আশ্রয় নিয়েছেন সেটা বড় কথা নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বলা হয়, বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি এবং সংখ্যালঘু নিপীড়নের কারণে কোনো বাংলাদেশি বিদেশ বাইরেও যায়নি। যদিও ভারত সবসময় বলে থাকে যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু নিপীড়নের কারণে প্রচুর হিন্দু ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। 

তবে ২০০১ সালের পয়লা অক্টোবর নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যালঘু নিপীড়ন শুরু হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন সব রেকর্ড অতিক্রম করে। এই সময় বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পালিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য জানা যায়। এখন প্রশ্ন হল যে, এই সমস্ত সংখ্যালঘু যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা যদি এখন নাগরিকত্ব লাভ করে তাহলে এটি বাংলাদেশের জন্য কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ এটি বাংলাদেশে যে বিভিন্ন সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন হয়েছে এবং তারা যে দেশ ত্যাগ করেছে এটি নির্মম বাস্তবতা। তবে এই আইনের একটি ইতিবাচক দিক হলো ২০১৪ সালের পর যারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এসময় যারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে। এতে বুঝা যাবে যে, কি পরিমাণ সংখ্যালঘু সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। আর এই আইনের নেতিবাচক দিক হলো, এই আইনের ফলে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষুণ্ণ হবে। বাংলাদেশে যে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে এটি বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হবে যেটি বাংলাদেশের জন্য অমর্যাদাকর।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭