ইনসাইড পলিটিক্স

ফখরুলকে নিয়ে রহস্যের জট


প্রকাশ: 13/03/2024


Thumbnail

সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে রহস্যের জট দানা বেঁধে উঠছে। তিনি কার সাথে বৈঠক করছেন এবং কি করছেন তা নিয়ে ক্রমশ প্রশ্ন উঠছে খোদ বিএনপির মধ্যেই।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে চারটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে এখন পর্যন্ত। প্রথমত, অনেকে বলেছেন যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

দ্বিতীয়ত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছিলেন, সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেছিলেন এবং সেখানে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকতে পারে।

তৃতীয়ত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে একাধিক দেশের কূটনীতিকদের সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সেখানে তারা তারেক জিয়াকে বাদ দিয়ে তাকে বিএনপির মূল দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাতে সম্মতি জানিয়েছেন।

চতুর্থত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির রাজনীতিতে তিক্তবিরক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে তারেক জিয়া যে প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করছেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। আর এই কারণেই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন এবং রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্যই সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সিঙ্গাপুর থেকে তিনি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকেও বার্তা দিয়েছেন তার অভিপ্রায় ব্যাপারে যে, তিনি রাজনীতি ছাড়তে চান।

এই সমস্ত চারটি বক্তব্যের কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রকার আলাপ-আলোচনা, গুঞ্জন চলছে। চলছে নানারকম ধূম্রজাল। প্রথমত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠকের ব্যাপারটিতে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে সময়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন, সেই সময় পিটার ডি হাস বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন বলে এক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে প্রথম গুজবটি একেবারেই কাল্পনিক এবং অযাচিত বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

দ্বিতীয়ত, যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎ, এটিও সঠিক নয়। কারণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ হয়নি। যদিও তারা দুজন একই হাসপাতালে একই বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

তৃতীয়ত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই অভিযোগেরও সত্যতার ব্যাপারে কোনো রকম সততা পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির নেতৃত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগে থেকেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং এটি বিভিন্ন কূটনীতিকদের মতামত। এটির ব্যাপারে নতুন করে কোনো পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন এবং সেই পরামর্শ দেওয়ার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। আর এই কারণেই এই বক্তব্যটি গ্রহণযোগ্য নয়।

চতুর্থত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এবং তিনি নিজে এখন আর বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে চান না—এই বক্তব্যটির ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুর থেকেই একটি ট্যাবলয়েড দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন যে, তিনি রাজনীতি করবেন। তবে তার সাক্ষাৎকারের বক্তব্যে এক ধরনের রহস্য আছে। তিনি রাজনীতি করলেও মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন কিনা সে সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। অর্থাৎ তিনি রাজনীতির দায়িত্ব পালন করলেও শেষ পর্যন্ত দলের মহাসচিব হিসেবে নাও থাকতে পারেন। 

তার যে শারীরিক অবস্থা এবং তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা তাতে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, এই মুহূর্তে নেতৃত্ব পরিচালনা করার মতো শারীরিক অবস্থা তার নেই এবং তার স্ত্রীও ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই বাস্তবতার ভিত্তিতেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি সার্বক্ষণিকভাবে দলকে পরিচালনা করা এবং দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অবস্থায় আছেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই বার্তাটি হয়তো তিনি দলের মহাসচিবকে দিয়ে থাকতে পারেন এবং লন্ডনে পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া হয়তো তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে থাকতে পারেন। কিন্তু তার একমত পোষণের অর্থ এই নয় যে, এখনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন। বরং বিএনপিতে একজন যোগ্য মহাসচিব পদপ্রার্থী না পাওয়া পর্যন্ত মির্জা ফখরুলকে এই দায়িত্ব অব্যাহত রাখতেই হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭