ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

তুরস্কজুড়ে রোজা পালনের মহা উৎসব


প্রকাশ: 13/03/2024


Thumbnail

কোথাও বাদ যায়নি বাহারি সাজসজ্জা, রাস্তার মোড় থেকে শুরু করে বাসার জানালা, চারিদিকে শুধু ব্যানার-ফেস্টুনে ঝুলানো অভিবাদন মূলক বাক্য। পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাতেই তুরস্কজুড়ে বিরাজ করছে রোজা পালনের এক মহা উৎসব।

শুধু ব্যানার-ফেস্টুনে অভিবাদনই শেষ নয়, তুরস্কের ঘরে বাইরে সর্বত্র শোনা যায় 'রমজানের শুভেচ্ছা, রমজান মুবারাক, আপনার জন্য রমজান কল্যাণময় হোক', এ ধরনের অভিনন্দন বাক্য। 

তুরস্কের রমজান এবং ঈদ আমাদের রমজান এবং ঈদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন ধরনের। 

তুরস্ককে বলা হয় মসজিদের দেশ। এখানকার সব এলাকায়, মহল্লায়, গ্রামে, গঞ্জে বিশাল বিশাল উচু মিনারের মসজিদ। 

রমজান মাসে মজসিদের মিনার গুলোকে বাহারি আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। আলোকরশ্মিতে লেখা হয় রমজান সম্পর্কিত বিভিন্ন বানী, হাদিস, আয়াত। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ ও তারাবির নামাজে মানুষের বিপুল উপস্থিতির কারণেই এ মাসে এখানকার মসজিদগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। 

উসমানীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এখনও তুরস্কের অনেক এলাকায় তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের সংকেত দেওয়া হয়।

তবে, রমজানের চাঁদ দেখার যে আনন্দ, যে উৎসব সেই আমেজ তুর্কিদের মধ্যে নেই। কারণ, এখানে অনেক আগে থেকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যাবহার করে চাঁদ উঠার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়।

তুর্কিদের ইফতার ও সেহরি 

তুর্কিরা ইফতার শুরু করে খেজুর দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের ফল, জয়তুন, পনির ও মিষ্টি থাকলেও তাদের ইফতার মেন্যুর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পিদে। পিদে- এটি বিশাল এক রুটি যা শুধু রমজানে মাসেই স্পেশাল করে তৈরি করা হয়।  তাই এটিকে রামাজান পিদে বা রমজানের পিঠা বলা হয়।  ইফতারের আগে আগে এই পিঠা কিনতে রুটির দোকানের সামনে বিশাল লাইন দেখা যায়। 

এখানে ইফতারিতে বুট-মুড়ি, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু এগুলো পাওয়া যায় না। এরা ইফতারে আমাদের মত ভাজাপোড়া খায় না। এরা বাংলাদেশের মতো ইফতার এবং রাতের খাবার ভিন্ন ভিন্নভাবে খায় না।  অর্থাৎ এক বসাতেই ইফতার এবং রাতের খাবার খেয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করে।

সেহরিতে তুর্কিরা সকালের নাস্তায় যে খাবার খায় সেগুলোই খায়। যেমন- রুটি, পনির, মধু, বাটার, সসিস, জয়তুন, শসা টমেটো ডিম, চা, ইত্যাদি।

রমজানে তুর্কিদের খুবই ইন্টারেস্টিং একটি জিনিস হচ্ছে ঢোল বাজানো। সেই উসমানীয় আমল থেকেই রাতে ঢোল পিটিয়ে সেহেরিতে জাগানোর রেওয়াজ আছে তুরস্কে। সেহেরির প্রায় এক দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই প্রতিটা মহল্লার ঢোলক অলি গলি ঘুরে ঘুরে ঢোল বাজান। এই ঢোলকদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় সিটি কর্পোরেশন থেকে। 

ইবাদত

এখানেও রমজানে মানুষের মধ্যে ইবাদতের পরিমান বেড়ে যায়। আছরের নামাজের পরে এবং ফজরের নামাজের পূর্বে এখানে মসজিদে মসজিদে একত্রে কুরআন পড়ার আসর বসে। ইমাম বা মুয়াজ্জিন কুরআন পড়েন আর প্রচুর মানুষ গোল হয়ে বসে কুরআন থেকে সেই আয়াতগুলো মনে মনে পরে।

রাস্তায় ইফতার

তুরস্কের মসজিদে ইফতার করার কোনো নিয়ম নেই। তবে, স্ট্রিট ইফতার বা রাস্তায় ইফতার নামে এখানে অনেক পুরাতন একটি নিয়ম চালু আছে। ধনী-গরিব, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, পুত্র নিয়ে মহল্লার সবাই এখানে ইফতার করে। সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে এক টেবিলে বসে ইফতার করে সবাই।

যে জায়গায় এই ইফতারের আয়োজন করা হয় সেখানে থাকে উম্মুক্ত আলোচনার জায়গা এবং স্টেজ। মাগরিবের নামাজের পরে ওখানে চলে, হামদ-নাত সহ বড় বড় প্রফেসর, আলেম, এবং ইসলামিক স্কলারদের সেমিনার। 

এছাড়াও, শিশুদের জন্য থাকে বিভিন্ন ধরনের আনন্দ উপকরণ। পাশেই বসে বিশাল মেলা। রঙ-বেরঙের নানা রকম জিনিস বিক্রি হয় এই মেলায়। মাঝ রাত পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। তুরস্কের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের নিজস্ব তৈরি জিনিসপত্র এখানে বিক্রি করতে নিয়ে আসে। লাইলাতুল কদরের আগের রাত পর্যন্ত প্রতিরাতেই চলে এই আয়োজন।

রমাজানের শেষের দিকে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ এতে কাফে বসে।

সবকিছু মিলিয়ে তুরস্কে রমজান পালন করা হয় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎসবের আমেজে। 

ইউরোপ এবং আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার লোক রমজান পালন করতে পুরো পরিবার নিয়ে এক মাসের জন্য তুরস্কে আসেন। তারা বড়বড় গুরুত্বপুর্ন মসজিদের পাশে পুরো রমজান মাস বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। 

কিন্তু তুরস্ক একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র। যেকারনে রমজানেও এখানকার হোটেল রেস্তোরাঁতে চলে খাওয়া-দাওয়া আনন্দ ফুর্তি। মদের দোকান, পানশালা এবং নাইটক্লাবগুলোও খোলা থাকে রমজানে। রাস্তার ধারে বা পার্কে বসে মদের বোতল হাতে নিয়ে মদ খাওয়া, গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ঘুরাফেরা করলেও কেউ এসে বাধা দেয় না। যে যার মত করে তার জীবন চালায় এবং ধর্ম পালন করে। ধর্ম নিয়ে এখানে নেই কোন বাড়াবাড়ি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭