ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকার নির্ধারিত নয়, বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে খেজুর


প্রকাশ: 14/03/2024


Thumbnail

প্রতিবছর রমজান আসলেই যেন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির হিড়িক পড়ে যায়। আর ইফতারের অন্যতম প্রধান উপাদান খেজুরের দাম যেন লাগামহীন হয়ে পড়ে। তবে এবার যেন তা হয়, সেজন্য রমজান শুরুর আগ থেকেই দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ইফতারে বহুল ব্যবহৃত দুই ধরনের খেজুরের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু এ দামে খেজুর বিক্রি করছেন না কোনো ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

কিন্তু গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর বাজারে সরকারের এই নির্দেশনা মেনে চলার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করলে তাঁদের লোকসান হবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২২০ টাকার নিচে কোনো খেজুরই নেই। মাঝারি মানের খেজুর কিনতেও গুনতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুর হিসেবে পরিচিত বাংলা খেজুর দোকানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর ইরাকের জাইদি খেজুর কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে কেন বিক্রি করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশ বিক্রেতা বলছেন, দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি তারা জানেন না। কয়েকজন বিক্রেতা আবার সরকারের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, বেশি দামে খেজুর কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদেরকে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ভুট্টো ব্যাপারী বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই। কেউ হয়তো বেশি পরিমাণে নিলে কিছুটা কম দামে দেওয়া সম্ভব।’ চাহিদা না কমা পর্যন্ত খেজুরের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না এই বিক্রেতা।

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম শেখ মনে করেন, এভাবে দাম বেঁধে দেওয়া ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, দাম বেঁধে না দিয়ে সরকার বরং টিসিবির মাধ্যমে খেজুর আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিতে পারত। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই। কেউ হয়তো বেশি পরিমাণে নিলে কিছুটা কম দামে দেওয়া সম্ভব।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে দেখা গেছে, শুল্ক–কর কমানোর পর গত এক মাসে (৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ) ৩৮ হাজার ২০৫ টন খেজুর আমদানি করা হয়। মোট আমদানির ২৮ শতাংশই ছিল জাইদি খেজুর। তবে সবচেয়ে বেশি এসেছে খোলা খেজুর বা ৩০ কেজির বস্তায় আনা খেজুর। গত এক মাসে মোট আমদানি হওয়া খেজুরের ৫১ শতাংশই এসেছে বস্তাভর্তি হয়ে।

খেজুরের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে গত সোমবার জারি করা স্মারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক, কর ও আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে খেজুরের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজারে খেজুরের দাম কার্যকর করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তদারকির মাধ্যমে বাজারে দাম কার্যকর করা কষ্টসাধ্য। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুরের দাম পড়ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। গত বছরের তুলনায় এই দাম সাড়ে ৪ শতাংশের মতো বেশি।

সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি না হওয়ার উদাহরণ আগেও ছিল। ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে সরকার এসব পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে ওই পণ্যগুলো বিক্রি হতে দেখা যায়নি। এর বাইরে ভোজ্যতেল, চিনি ও রান্নার তরল গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বিভিন্ন সময়ে সরকার নির্ধারণ করে দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বাজারে কার্যকর হয়নি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যসচিব গোলাম রহমান বলেন, মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে এভাবে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বাজার ঠিক করতে গেলে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সরকার আমদানি করে চাহিদানুসারে জোগান নিশ্চিত করবে। তখন এমনও দেখা যাবে যে ক্রেতারা সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়েও কম দামে পণ্য কিনতে পারছেন।

রাজধানী ঢাকার বাজারে উন্নতমানের প্রতি কেজি খেজুর অন্তত এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি। সৌদি মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, আজোয়া এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭