ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আবারও বিজেপি ক্ষমতায় আসলে কেমন হবে ভারতের পরিস্থিতি?


প্রকাশ: 14/03/2024


Thumbnail

সমাজ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানসিকতা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তির বদলসহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়, কোন কিছুই বাদ যায়নি মোদির শাসনামলে। 

সম্প্রতি ভারত বহু বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) কার্যকর করেছে। ২০১৯ সালে লোকসভায় আইনটি পাস হওয়ার চার বছর পর নরেন্দ্র মোদির সরকার লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সিএএ বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে অনিবন্ধিত হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি ও জৈন সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু মুসলিমরা এর আওতায় পড়ছে না। এতে করে ভারতে থাকা ২০ কোটি অনিবন্ধিত মুসলিম আশ্রয়হীন হয়ে পরবে।

ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় মুছে দিয়ে ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার এ পরিকল্পনা করছে নরেন্দ্র মোদী। আর এরই ধারাবাহিকতায় সিএএ কার্যকর করেছে ভারত সরকার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করেন, দেশটির অন্য সংখ্যালঘুরা তার প্রতি আস্থাশীল হলেও মুসলমানদের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। তারা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের জন্য ক্ষতিকর। মূলত, এই কারনেই  মুসলমানদের কোণঠাসা করে রাখতে চায় বিজেপি। 

স্বাধীনতার শুরু থেকেই ভারত ছিল বিভিন্ন ভাষা, জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মিলিত একটি রূপ। আর ভারতের গণতন্ত্রই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। 

ধর্ম-বর্ণ নিরপেক্ষ সরকারগুলো  মোটামুটি এই বন্ধন অটুট রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। অথচ, দেশটির বর্তমান মুসলিমবিদ্বেষী সরকার ভারতের এই পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। 

২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত পদে পদে বিপর্যস্ত হয়েছে। তার একটি বড় উদাহরণ দেশটির অর্থনীতি। ভারতের মোট জিডিপি ২০১৮ সাল থেকে থেকে কমতে শুরু করে আর বর্তমানে এতই খারাপ অবস্থা যে, বাংলাদেশ ভারতের মাথাপিছু আয়কে টপকে গেছে। এখানে, বাংলাদেশের এই সাফল্য অবশ্যই অভিনন্দন যোগ্য। কিন্তু মজার বিষয় হলো- ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম ছিল। কিভাবে হলো  ভারতের এই অবস্থা!! 

বিশ্লেষকরা বলাবলি করছেন, ভারত আবার অতীতের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে কিনা! বা আবারও বিজেপি ক্ষমতায় আসলে কেমন হবে ভারতের অবস্থা?

ভারতীয় গণতন্ত্র একটা সময় ইতিবাচক শক্তি হিসেবে সভ্য সমাজে পরিগণিত হতো। কিন্তু বর্তমানে ভারত অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত এবং বিশ্রী ধরনের বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে দেশটিতে। এছাড়াও, আইন ও নীতির সাহায্যে সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানদের নিপীড়ন বেড়েই চলেছে।

তাছাড়া এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বিজেপি তাদের উগ্রতার পরিচয় দিয়েছে। ১৯৯২ সালে হিন্দু উগ্রপন্থীরা রামমন্দির নির্মাণের জন্য অযোদ্ধার বাবরি মসজিদটি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। 

এরপর, ২০০২ সালে মোদির রাজ্য গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এতে দুই সহস্রাধিক মানুষ নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম। এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিলো। 

ধর্মনিরপেক্ষ নীতিমালাকে উপেক্ষা করে মোদি সরকার একের পর এক যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। দেশটিকে আগের রূপে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলেও সময় লাগতে পারে কয়েক দশক। 

আর দুঃখজনক সত্যি যে, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের বিভাজনের মাধ্যমে মোদি ও তার দল বিজেপি রাজনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

বিজেপির এই মুসলিমবিদ্বেষী পদক্ষেপ অর্থনীতির মতো জটিল বিষয়গুলো থেকেও ভোটারদের মনোযোগ সরিয়ে দেয়, যা নির্বাচনে জয়ী হতে বরাবরই বিজেপির হাতিয়ার রূপে ভূমিকা রেখেছে।

দেশের এমন বেহাল দশায় বিজেপি আবার ও ক্ষমতায় আসলে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে আর ভারতে অবস্থানরত মুসলিমদের ওপর কত নিপীড়ন চলবে তা নিয়ে শঙ্কিত বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭