কালার ইনসাইড

সাদি মহম্মদের মৃত্যু আমাদের কি লজ্জিত করে না?


প্রকাশ: 14/03/2024


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত শহীদের সন্তান সাদি মহম্মদ অভিমানে অপমানে বিদায় নিলেন। তার যে মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল সেই মর্যাদা তিনি পাননি। তাকে যে সম্মান জানানোর কথা ছিল, সেই সম্মানটুকুও তিনি পাননি। বাংলাদেশে এখন মর্যাদা সম্মান পাওয়ার জন্য ধর্না দিতে হয়, তেল মারতে হয়, নতজানু করতে হয়, তোয়াজ করতে হয়। সাদি মহম্মদ সেটি করতে পারেননি। সে জন্য তার যে অবস্থান, তার যে অবদান, সেই অবদানের স্বীকৃতি পাননি। 

বাংলাদেশের বহু অযাচিত লোকজন একুশে পদক পেয়েছেন, স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। অযোগ্য লোকদের তালিকায় এখন একুশে পদকের তালিকায় দীর্ঘ। যদি আমরা দেখি যে, কারা একুশে পদক পান, তাদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তির সংখ্যা কম, অযোগ্যরাই বেশি। অধিকাংশই ধর্না দিয়ে, তেল মেরে বিভিন্ন দেন দরবার, লবিং করে এই ধরনের পদকগুলো পান। 

সামনে স্বাধীনতা পদক ঘোষণা করা হবে। স্বাধীনতা পদকের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে এমন কিছু ব্যক্তি এই পদক পেয়েছেন যাতে লজ্জায় আপনার মাথা হেঁট হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাথা হেঁট হলে কি হবে? যারা পদক পান এটি তাদের জন্য ব্যবসা। এটি দেখিয়ে তারা আখের গোছাবে। স্বাধীনতা পদকের যে মূল নীতি, আদর্শ সেটা লঙ্ঘন করে একজন তথাকথিত টেলিভিশন উপস্থাপককে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছিল, যিনি পৈত্রিক সূত্রে রাজাকারের সন্তান। যার পিতা স্থানীয়ভাবে রাজাকার হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে কোন অবদান না রেখে শুধুমাত্র তদবির এবং তেল মেরে তিনি স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন। এই ব্যক্তি স্বাধীনতা পদক পাওয়ার ঘটনাটি এত রোমাঞ্চকর যে, প্রথমে তার নাম ছিল, পরে যখন জানাজানি হয়ে গেল যে তিনি স্বাধীনতা পদক পাওয়ার জন্য কোন যোগ্যতাই তার নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অবদান রাখা ব্যক্তিরাই স্বাধীনতা পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, তখন তার নাম বাদ দেওয়া হয়। এরপরও তিনি হাল ছাড়েননি। আবার তিনি তদবির করেন। এই তদবির করতে গিয়ে তিনি তৎকালীন সংস্কৃতি মন্ত্রীকে হাতিয়ে নেন এবং তৎকালীন সংস্কৃতি মন্ত্রীও তালিকা বহির্ভূত ভাবে স্বাধীনতা পদক্ষেপ পেয়ে যান। এভাবেই বাংলাদেশের পদকের ঘটনা ঘটে। 

এবার একজন শিল্পী পদক পেয়েছেন, যিনি একজন সন্ত্রাসীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাভোগও করেছিলেন। এখন এই ব্যক্তির সঙ্গীত জগতে এমন কোন অবদান নেই যে, তাকে একুশে পদক দিতে হবে। এমন কোন ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা তিনি দেখাতে পারেননি, যার জন্য তাকে একুশে পদক দিতে হবে। কিন্তু শাসক মহলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে তিনি বিভিন্ন জায়গায় দেন দরবার করে একুশে পদক পেয়েছেন। এ রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। কাউকে হেয় করার জন্য নয়। কিন্তু যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে পদক যায় না। যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে পদক না গেলে যোগ্যরা যে কিভাবে আশাহত হন, কিভাবে ব্যথিত হন, কিভাবে অপমানিত হন তার একটি বড় প্রমাণ সাদি মহম্মদ।

সাদি মহম্মদ বাংলাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গিত জগতের একটি নক্ষত্র। কিন্তু আমরা কি তাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। স্বীকৃতি দেইনি। কারণ সাদি মহম্মদ আর আট-দশজনের মত তৈল মর্দন করতে পারবেন না, সাদি মহম্মদ দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধর্না দিতে পারবেন না। সাদি মহম্মদ পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। আর এ কারণে পুরস্কার বঞ্চিত হয়েছেন সাদি মহম্মদ।

পুরস্কার একজন ব্যক্তির যোগ্যতার মাপ কাঠি নয়। আবার পুরস্কারের মাধ্যমে একজন মানুষ সম্মানিত হন। আর এ কারণে পুরস্কারগুলো অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া আগে একটু ভাবা দরকার যে, যোগ্য ব্যক্তিরা পুরস্কার না পেলে কত বড় অপমানিত হন। কিভাবে হতাশাগ্রস্ত হন। সাদি মহম্মদ হয়ত জীবন দিয়ে সেটি শাসক মহলকে শিক্ষা দিলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭