ইনসাইড পলিটিক্স

তবুও তারেকের মন পেলেন না মেজর হাফিজ


প্রকাশ: 15/03/2024


Thumbnail

মেজর হাফিজ একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। শুরু থেকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। প্রয়াত জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর ছিলেন। কিন্তু তারপরও বিএনপিতে তিনি গুরুত্বহীন। মাঝে মাঝে নিজেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। তারেক জিয়ার নেতৃত্বের সমালোচনা করেন, বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। কিন্তু তারপর দলেই বিতর্কিত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

সাম্প্রতিক সময়ে আবার তিনি বিএনপির মূল ধারায় ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসা শেষ করে দেশে ফেরার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে অবশ্য তিনি জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্তি পেয়েই তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তারেক জিয়াকে খুশি করার চেষ্টা করছেন।

গতকাল স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপি যে কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটিতে মেজর হাফিজ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এটি একটি অগুরুত্বপূর্ণ কমিটি। এই কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি খুশিতে আত্মহারা। বিএনপি আগামী কিছুদিনের মধ্যে ক্ষমতায় আসবে এমন ভবিষ্যতবাণী করেছেন নতুন জ্যোতিষী মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ।

শুধু তাই বলেননি, তিনি এটিও বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। তিনি হঠাৎ করে এত বড় বিএনপি হয়ে গেলেন যে তারেক জিয়া এবং বিএনপির সমালোচনাও ভুলে গেলেন। কদিন আগেই তিনি বলেছিলেন যে বিএনপি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলনের কৌশল ব্যর্থ। এই ধরনের আন্দোলন নিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করছিলেন। এ সময় গুঞ্জন ছিল যে তিনি দল ত্যাগ করে পৃথক অবস্থান নেবেন বা নির্বাচনে যাবেন। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত শাহজাহান ওমরের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি বা তৈমুর আলম খন্দকারের মতো দলও ত্যাগ করেননি, বিএনপিতেই ছিলেন। কারণ অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ বুদ্ধিমান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে দলছুটদের অবস্থা এবং পরিণতি ভয়াবহ হয়। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপিতে থেকে যান।

কিন্তু বিভিন্ন নাশকতার মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় প্রথমে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে সরকার তার স্বাস্থ্যগত বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেয় এবং বিদেশ থেকে চিকিৎসা করার পর বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ আদালতে হাজিরা না দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হন। এটি একটি স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া। এই গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে মুক্তি পেয়ে এখন তারেক জিয়ার কাছে আসার চেষ্টা করছেন, মন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, তারেক জিয়া মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজকে ‘ডাবল এজেন্ট’ মনে করে। তারা মনে করে যে, কিছু হালুয়া রুটি পাওয়ার আশায় মেজর হাফিজ কখনও সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ হন। সরকারকে সুবিধা দিতে বিএনপির পক্ষে নানারকম বক্তব্য দেন। আবার যখন সরকার তাকে গুরুত্ব দেয় না বা সরকারে তার মূল্যায়ন হয় না সে সময় তিনি বিএনপির চেয়েও বড় বিএনপি হয়ে তারেক জিয়ার বদান্যতা পাওয়ার চেষ্টা করেন এবং তারেক জিয়ার কাছে নিজেকে একজন সাচ্চা বীর সৈনিক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।

কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত ব্যক্তিদের যারা বিভিন্ন সময়ে তার সমালোচনা করেছে তাদেরকে একেবারেই পছন্দ করেন না। তারেক জিয়া কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। রাজনৈতিক দলে যদি কোনো স্বৈরাচার থেকে থাকে সেটা হলেন তারেক জিয়া। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যারাই বিএনপিতে একবার সমালোচনা করেছে তারাই হয় বিএনপিতে অপাংক্তেয় পতিত হয়েছে অথবা বিএনপি থেকে বিতাড়িত হয়েছে। মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ বিতাড়িত না হলেও পতিত অবস্থায় তারেক জিয়ার চাটুকারিতা করছেন। কিন্তু তার মন পান না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭