ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

জলদস্যুদের হামলার শিকার বিভিন্ন জাহাজ, রহস্য কি?


প্রকাশ: 15/03/2024


Thumbnail

গভীর সমুদ্রে রাতের অন্ধকারে হানা দেয় তারা, কেউ কিছু বুঝে উঠবার আগেই শেষ হয়ে যায় সব। এভাবেই ঝটিকা আক্রমণ চালায় জলদস্যুরা। বরাবরই জলদস্যুরা সুযোগ সন্ধানী। আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো লোহিত সাগরে হুথিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগে ভারত মহাসাগরের গালফ অফ এডেনে আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে উঠেছে সোমালিয় জলদস্যুরা। 

সম্প্রতি, ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতো থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে যাচ্ছিল জাহাজটি। এমন সময় সোমালিয় জলদস্যুদের ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল জাহাজটি ছিনতাই করে। জাহাজের ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়।  

সোমালিয়ার দুর্ভাগ্যের সাথে জড়িয়ে গেলো এই বাংলাদেশি নাবিক ও তাদের পরিবারেরও ভাগ্য। তাদের মুক্তির জন্য যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সরকার ও বিশ্বে যারা সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল, তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

কেন সোমালিয়ার জেলেরা জলদস্যু হয়ে উঠলো?

আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান পানি ছিল সোমালিয়ার উপকূলের। কারণ, এই পানিতেই বিচরণ করে টুনা, মার্লিনসহ দামি মাছেরা। আর, এই সম্পদই সোমালিয়ার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। সেখানে নজর পড়লো বিদেশি মাছ শিকারিদের। তারা আধুনিক নৌযান ও গভীরে ফেলবার মতো জাল নিয়ে সোমালিয়ার সমুদ্রসীমার মাছ চুরি করতে থাকলো। এতে বেকার হয়ে পড়তে থাকলো সোমালিয়ার সামুদ্রিক জেলেরা।    

এরপর, ১৯৯১ সালে সামরিক শাসনের উৎখাতের পরে, দুই দশকের বেশি সময় যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত সোমলিয়াতে কার্যকর কোন সরকার ছিল না। এই সময়টাতে আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘতম উপকূল সমৃদ্ধ দেশটির জলসীমার নিরাপত্তায় কোন কোস্টগার্ড বা বাহিনী ছিল না।এতে এই অঞ্চলে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতে স্থানীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। আর তখনই তারা দস্যুবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।

তাছাড়া, সোমালিয়া খনিজ সমৃদ্ধ দেশ হওয়ায় সম্পদের জন্যও দেশটির  নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালি ও ফ্রান্স। নব্বই দশক থেকে একের পর এক মার্কিন আক্রমণ, সিআইয়ের গোপন অভিযান, মার্কিন মদদে ইথিওপিয়ার আগ্রাসনে বিধ্বস্ত হয়ে পরে দেশটি। দেশটির দুর্ভিক্ষপীড়িত কোটি খানেক মানুষ দিশেহারা হয়ে পরে।

এমন পরিস্থিতে, পরিবার ও নিজেদের জৈবিক চাহিদার পূরণে জলদস্যুবৃত্তিকে বেছে নেয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না। তাছাড়া, মৎস্য শিকারের চেয়ে দস্যুতায় আয়ের পরিমাণও অনেকগুণ বেশি।

সোমালিয়দের সাম্প্রতিক হামলা:

ইউন্যাভ ফর আটালান্টা হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সোমালিয়া উপকূলে অন্তত ১৪টি জাহাজ ছিনতাই করা হয়েছে।

এর মধ্যে ইরানের পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার নৌকা এবং লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী সেন্ট্রাল পার্ক নামে একটি জাহাজের জেলে ও নাবিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

এমভি রুয়েন নামে মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ ডিসেম্বরে ছিনতাই করা হয়। এখনো এই জাহাজের নিয়ন্ত্রণ হামলাকারীদের হাতেই রয়েছে। হামলাকারীদের কাছে এখনও  জিম্মি রয়েছেন ১৭ জন ক্রু।   

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) মতে, এটি ছিল ছয় বছরের মধ্যে সোমালিয়ায় প্রথম সফল হাইজ্যাকিং।

গত জানুয়ারিতে ভারতীয় নৌবাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায়। এক সপ্তাহে তিনটি অভিযানে ১৯ জন জিম্মিকে মুক্ত করতে সমর্থ হয় তারা। তাদের মধ্যে ১১ জন ইরানি নাগরিক, বাকিরা পাকিস্তানি। ভারতীয় বাহিনীর তরফে জানানো হয়, এদের সবাই সোমালিয় দস্যুদের হাতে বন্দি ছিলেন। 

সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ২৩ জন ক্রুসহ জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় জলদস্যুরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭