ইনসাইড বাংলাদেশ

১৬ মার্চ: বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক


প্রকাশ: 16/03/2024


Thumbnail

১৯৭১ সালের এইদিনেও অব্যাহত ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে চলমান অসহযোগ আন্দোলন। ১৬ মার্চ সকালে ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বের হয়। শোক আর প্রতিবাদের প্রতীক কালো পতাকা উড়ছিলো বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত গাড়ির ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে। উইন্ড স্ক্রিনে ছিলো বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পতাকা। বাঙালি হত্যার এই প্রতীকী প্রতিবাদ সাথে নিয়েই এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বঙ্গবন্ধু।

সকাল থেকেই উৎসুক জনতা অপেক্ষায় ছিলো বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠকের ফলাফল কি হয় তা জানতে। বৈঠকে যাবার পথে এক হাতে কালো পাইপ নিয়ে বঙ্গবন্ধু অন্য হাতটি নাড়ছিলেন আশায় বুক বাধা জনতার উদ্দেশে। সঙ্কট নিরসনের আন্তরিক আশা নিয়ে তিনি যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে।

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে। তবে ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক নিয়ে প্রধান শিরোনাম ছাপে সংবাদপত্রগুলো। এতে লেখা হয় “সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী বাঙালির অপ্রতিদ্বন্দ্বি নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় নীতি ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে দেড়শ’ মিনিট কাল স্থায়ী এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। একজন চাইছেন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান, অন্যজনের মনে গণহত্যার ছক। একজনের মনে স্বাধীনতার মন্ত্র, অন্যজনের মনে নির্মূল করার বাসনা। একজন কামনা করছেন আর রক্তপাত নয়, আরেকজন দেখতে চান রক্তের হোলি খেলা। এই যেখানে আলোচনার প্রেক্ষাপট, সেখানে বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে!"

এদিন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আলোচনার পাশাপাশি সারাদেশে আন্দোলন বাঁধভাঙ্গা রূপ নেয়। মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিলো রাজপথ। ৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই অসহযোগ আন্দোলন এরই মধ্যে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে ময়দানে সর্বত্রই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা নিয়ে তোলপাড়। অসহযোগ আন্দোলনের ১৬তম দিন বঙ্গবন্ধুর নতুন নির্দেশ আসে। জানানো হয়, এখন থেকে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক কেন্দ্রের শুল্ক, কর, আবগারি কর ও বিক্রয় কর গ্রহণ করবে। কিন্তু এসব কর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে জমা দেয়া হবে না।

এভাবেই অসহযোগ আন্দোলন তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। মওলানা ভাসানী ময়মনসিংহের জনসভায় দাবি করেন, “বাংলাদেশের পাওনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিন। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বুদ্ধিজীবীদের সভায় আবুল ফজল, সৈয়দ আলী আহসান, ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

বাঙালিদের এই উত্তাল আন্দোলনে বসে ছিলো না পাকিস্তানী হানাদাররা। সাতক্ষীরায় মিছিলে গুলি করে মানুষ মারা হলো। দেশের মানুষকে অনাহারে মারার ষড়যন্ত্র সফল করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ত্রাণ হিসেবে আসা চার জাহাজ বোঝাই গম চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করে করাচি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭