ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে দ্বিতীয় প্রজন্মের উত্থান


প্রকাশ: 16/03/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের সন্তানরা এখন ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় অন্তত এক চতুর্থাংশ মন্ত্রী রয়েছেন যাদের পিতারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে তারা রাজনীতিতে এসে জায়গা করে নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৭৩ জনই হলেন পারিবারিক সূত্রে আওয়ামী লীগ থেকে আসা। তাদের পিতা বা মাতা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এ কারণেই তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছেন এবং সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে ক্রমশ দ্বিতীয় প্রজন্মের উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শিরীন শারমিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। শিরীন শারমিন চৌধুরী সিএসপি রফিকউল্লা চৌধুরীর কন্যা। কিন্তু রফিকউল্লাহ চৌধুরীর সিএসপির চেয়ে বড় পরিচয় ছিল তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন রাজনৈতিক সহচর ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মেধাবী এই আমলা। ৭৫ এর পরবর্তী সময়ে তিনি নির্যাতন ভোগ করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রি হিসাবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের পুত্র। অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন এবং ৭৫’ পরবর্তী সময়ে যারা খুনি মোস্তাককে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে স্থান পাওয়া ড. দিপু মনির বাবা এমএ ওয়াদুদ ছাত্রলীগের নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

নাজমুল হাসান পাপন প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সন্তান। জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যেমন ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ছিলেন। সারা জীবন তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে নেতাদের সাথে অনুগত থেকে এক নজির স্থাপন করেছিলেন।

বর্তমান মন্ত্রিসভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রি হিসাবে আছেন ফরহাদ হোসেন। ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত সহিউদ্দিন বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক এবং মেহেরপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন সহিউদ্দিন বিশ্বাসের পুত্র এখন আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রশাসন বিভাগের মন্ত্রি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মহিবুল হাসান চৌধুরী হলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র। মহিউদ্দিন চৌধুরী যেমন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসভাজন ও আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসাবে তার অত্যন্ত খ্যাতি ছিল। লড়াকু যোদ্ধা হিসাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন।

বর্তমানে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন খালেদ মাহমুদ চৌধুরী। যিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ আব্দুর রউফ চৌধুরীর পুত্র।

বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা শিমিন হোসেন রিমি এবার প্রতিমন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাজউদ্দীন আহমেদের পুত্র সোহেল তাজও ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রির দায়িত্ব পালন করেছিল।

আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন প্রয়াত রহমত আলীর কন্যা রুমানা আলী। রহমত আলী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করতেন। আতাউর রহমান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়শা এবার অর্থ প্রতিমন্ত্রি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আতাউর রহমান কায়সার বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এবারের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রি হিসেবে জায়গা পেয়েছেন আহসানুল ইসলাম টিটু, যিনি আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের পুত্র। আলহাজ্ব মকবুল হোসেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকার ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মন্ত্রি না হয়েও আলোচনায় আছেন প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র নাহিম রাজ্জাক, প্রয়াত আব্দুল জলিলের পুত্র, মোহাম্মদ নাছিমের পুত্র। মোট হিসেব নিয়ে দেখ যায় যে, এবার যারা এমপি হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৭৩ জনের পিতা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭