ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মাল্টিকালচারিজমের দেশ কানাডায় রমজানের আদ্যোপান্ত


প্রকাশ: 16/03/2024


Thumbnail

রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদ গেটের সামনে পসরা সাজিয়ে বসে আতর আর জায়নামাজের দোকানগুলো। মাসব্যাপী রোজা রাখার সময়সূচি সম্বলিত রমজানের ক্যালেন্ডার থাকে সবার হাতে হাতে। এভাবেই ব্যাপক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে রমজান শুরু হয় মাল্টিকালচারালিজমের দেশ কানাডায়। 

বাংলা ইনসাইডার আয়োজিত 'ইনসাইড রমজান' ধারাবাহিক এর আজকের পর্বে আমরা জানবো কানাডার রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি-  

মহিমান্বিত মাস রমজানকে উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির পালন করা হয় কানাডায়। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। 

উৎসবের আমেজ

রমজানে কানাডার মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে বিশেষ উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ও ভিন্ন ভিন্ন দেশের সব মুসলিমরা রমজান উপলক্ষে একত্রিত হন, উৎসবে মেতে ওঠেন। সাদা-কালোর ভেদাভেদ উপেক্ষা করে, খাবার-সংস্কৃতি ভাগাভাগির অনন্য উৎসব রমজানে কানাডায় মুসলিমদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। মসজিদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমরা রোজা ভাঙার জন্য ইফতারে একত্রিত হন। এ সময় একটি চমৎকার পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয় তারা।

ইফতার ও সেহরির খাবারে বৈচিত্র

রমজানজুড়ে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না করেন। কমিউনিটির অন্যান্যদের সঙ্গে পরস্পর সেসব খাবার ভাগাভাগি করেন। প্রায় প্রতিটি মহাদেশের খাবারের স্বাদ নিতে পারেন মুসলিমরা। এর মধ্যে যেমন রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাদের বিরিয়ানি, তেমন রয়েছে ইথিওপিয়ান ইনজেরা বা ইউক্রেনিয়ান পেরোজিও।

শিশুদের বিশেষ স্মৃতি

রমজানে কানাডার মুসলিম পরিবারগুলো বাচ্চাদের বিশেষ স্মৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়। তারা রমজানের বিভিন্ন খাবারের আয়োজনসহ ধর্মীয় নানা বিষয় শিক্ষা দেয়। এতে শিশুরা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। অনেক পরিবার কমিউনিটির অন্যান্য বাচ্চাদের নিয়ে স্লিপওভারের আয়োজন করে। যেখানে বাচ্চারা খাবার ভাগাভাগি করে খায় এবং মজা করে।

লণ্ঠন উপহার

রমজানে প্রতিবেশী মুসলিমদের আলংকারিক লণ্ঠন উপহার দেন অন্য মুসলিমরা। এটি রমজানের আরবীয় সংস্কৃতি। যা কানাডার মুসলিমদের মধ্যে বেশ শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসলিমরা এসব লণ্ঠন বিতরণ করেন।  

রমজানে শান্ত আবহ

কানাডায় রমজান অনেকটাই শান্তভাবে পালিত হয়। মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মতো কানাডায় রমজানে হৈ-হুল্লোড় হয় না। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব মুসলিম তাদের দেশে রমজানের বিশাল আয়োজনের কথা স্মরণ করেন। মুসলিমরা মসজিদে একত্রিত হন। ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রমজান উদযাপন করেন। কানাডায় রমজানে তেমন লোক সমাগম না হলেও রমজানের প্রতি সবার মনোযোগ থাকে শতভাগ।

উন্মুক্ত ইফতার আয়োজন

কানাডার বিভিন্ন মসজিদে ইফতারের বিশাল আয়োজন করা হয়। দিনভর পরিশ্রম করেও ইফতারের সময় শিশুদের নিয়ে মসজিদে হাজির হন মুসল্লিরা। 

এছাড়াও, উইনিপেগের গ্র্যান্ড মসজিদ বেশ কয়েক বছর ধরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ইফতার আয়োজন করা হয়। বার্ষিক ‌‌‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ইভেন্টটি রমজানে মুসলিমদের সাহায্য করে।  

কানাডায় মুসলিমদের বসবাস

কানাডা ন্যাশনাল হাউসহোল্ড সার্ভে অনুযায়ী, কানাডায় ১০ লাখেরও বেশি মুসলমান বাস করে। বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে কানাডা বিশ্বের অন্যতম গ্রহণযোগ্য দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার কারণে বৈচিত্র্য এবং বহু সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। দেশটির প্রতিটি প্রদেশেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম রয়েছে। তবে মুসলিমদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অন্টারিও, কুইবেক, আলবার্টা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও ম্যানিটোবায়। সবাই রমজানের চেতনায় উজ্জীবিত হয়।

দীর্ঘ সময়ের রোজা

বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রোজা রাখতে হয়, তার মধ্যে কানাডা অন্যতম। দেশটিতে এ বছর জায়গাভেদে প্রায় ১৪ ঘণ্টা রোজা পালন করতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের রোজা রেখেও বেশির ভাগ মুসলিম তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। রমজান এলে বেশির ভাগ কর্মস্থলেই তারা সহকর্মীদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে থাকেন।

প্রবাসী বাঙালি মুসলিমদের প্রস্তুতি 

কানাডায় অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালি মুসলিমরা ছুটির দিনসহ কর্মময় দিনগুলোতেও পরিবার-পরিজন নিয়ে রমজানের বিশেষ পন্যগুলো কেনেন। প্রবাসী বাঙালিদের মালিকানায় গ্রোসারিগুলো যেন দেশের মতোই বাংলাদেশি পণ্য দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে। বরফাচ্ছন্ন কানাডার প্রায় ৮ মাসই বরফে আচ্ছাদিত থাকে। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। কখনও প্রচণ্ড বৈরি আবহাওয়া প্রবাসী বাঙালিদের রমজানের প্রস্তুতি ম্লান করতে পারে না।

কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইফতার সংস্কৃতি 

রমজান মাসে বাংলাদেশের মতো সেখানেও বাঙালিরা ছোলা-মুড়ি মেখে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির অপেক্ষায় থাকেন। ইফতারের আয়োজনে থাকে পেঁয়াজু, কলা, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর, চিকেন হালিম আর শরবত। বিশেষ খাবার হিসেবে কমলা, আঙুর, আপেলসহ নানা দেশের বৈচিত্র্যময় ফল। বাংলাদেশি হোটেলগুলোতেও ইফতারিসহ খিচুড়ি ও বিরিয়ানির বেচাকেনা চলে জমজমাটভাবে।

ঈদ উৎসব

রমজান শেষে কানাডিয়ান মুসলিমরা ঈদ-আনন্দে মেতে উঠেন। এ উপলক্ষে রমজান মাসে নতুন জামা-কাপড়সহ ঈদের কেনাকাটা করেন। বাচ্চাদের নতুন নতুন জিনিস কিনে দেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেন। একসঙ্গে সবাই মিলে ঈদ উদযাপন করেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭