ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারতের নির্বাচন: বাংলাদেশের উপর কী প্রভাব পড়বে?


প্রকাশ: 16/03/2024


Thumbnail

আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ভারতের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কারা ভারতে সরকার গঠন করবে তা নির্ধারিত হবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলে বলা হয়েছে, সাত দফায় ভোট হবে এবং ৪ জুন ভোট গণনা হবে৷ ওই দিন জানা যাবে ভারতের দিল্লির মসনদে কে বসছে।

তবে ভারতের বিভিন্ন জরিপ এখন পর্যন্ত বলছে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাই বেশি।  ভারতের দৃঢ় গণতন্ত্রের দেশে জনগণ সবসময় চমক দেখাতে পছন্দ করে। শেষ পর্যন্ত ভারতের জনগণ কী সিদ্ধান্ত নেয়, কোন পথে কাকে ভোট দেয় তার উপর নির্ভর করছে ভারতের পরবর্তী সরকার গঠনে অনেক কিছু৷

বিশেষ করে, নির্বাচনের আগে আগে বিজেপি সরকার বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্তগুলোর ফলে একদিকে যেমন তাদের ভোট বাড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অন্যদিকে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার গণতন্ত্রকামী মানুষরা এই ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মান্ধ মৌলবাদী সিদ্ধান্তগুলোকে প্রত্যাখ্যানও করতে পারে।

নির্বাচনের আগে আগে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা কিংবা ভারতের কৃষকদের বিদ্রোহ সবকিছু মিলিয়ে বিজেপির বিজয়কে কঠিন করবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠছে।

তবে নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ভারতের হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদকে জাগ্রত করে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্বাচন এবং জনগণের উপর কী প্রভাব ফেলবে?

আজ শনিবার (১৬ মার্চ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, ভারত পাশে ছিল এ জন্যই পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের উপর বেশি নাক গলাতে পারেননি। তিনি ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের প্রভাব এবং অবস্থান সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তার স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছিল এবং এ কারণেই শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছিল এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল তা অনেকটাই সংযত রেখেছিল।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের উপর কী প্রভাব ফেলবে?

প্রথম যে প্রভাবটির কথা বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে তা হলো, এই নির্বাচনের সময়ে ভারত অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাবে। বিশেষ করে, রাষ্ট্র এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগ দেবেন। ফলে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকারী যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র চায় না বা অন্যরকম কিছু হোক চায় তারা একটা সুযোগ পাবে। ভারতের কম নজরদারির সুযোগে বাংলাদেশে কোনো অস্থিরতা বা অস্থিতিশীলতা তৈরি করা যায় কি না সে নিয়ে অনেকে চেষ্টা করবে। বিশেষ করে, ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমারা ভারতের এই ব্যস্ততার সুযোগটা গ্রহণ করতে পারে বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করে৷

দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হোক না হোক যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না বলেই মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কারণ ভারত কতগুলো মৌল নীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই মৌলিক নীতির কোনও পরিবর্তন হয় না। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কটি ভারতের মৌলিক নীতিরই একটি অংশ এবং ভারতের উভয় দলই মনে করে যে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখাটা বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা অত্যন্ত জরুরী।

বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয় দলই মনে করে যে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আছেন জন্যই বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে না।

ভারতের রাজ্য গুলো বিশেষ করে সেভেন সিস্টার একটা শান্তির মধ্যে রয়েছে। আর বিচ্ছিন্নতা বাদীদেরকে মদদ দেয়া হচ্ছে না বলেই ভারত এখন বিচ্ছিন্নতা বাদী মুক্ত হতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে।

আর এ কারনেই ভারতে বিজেপি বা কংগ্রেস যারাই শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসুক না কেন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না এবং ভারতের বাংলাদেশ নীতিরও কোনো পরিবর্তন হবে না।

ভারত বাংলাদেশে সব সময় চায় যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকুক এবং এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোন বিকল্প ভারতের কাছে নেই। আর তাই ভারতের নির্বাচনের সময়টি বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর। তবে নির্বাচনের পরবর্তীতে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক একই ধারায় অব্যহত থাকবে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭