ইনসাইড বাংলাদেশ

ওই মহামানব এসেছিলেন বাঙালির মুক্তির বার্তা নিয়ে


প্রকাশ: 17/03/2024


Thumbnail

ওই মহামানব আসে;

দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে

মর্ত ধূলির ঘাসে ঘাসে।

সুরলোকে বেজে উঠে শঙ্খ,

নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—

এল মহাজন্মের লগ্ন।...

জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয়,

মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই চরণগুলো মনে করিয়ে দেয় বাঙালি জাতির স্বাধীনতার রূপকার মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের দিনক্ষণ। আজ ১৭ মার্চ। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন পরিপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। যেকোনো বিবেচনায় তিনি সর্বকালের সেরা বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি মুক্তির মহানায়কখ্যাত এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। 

আমরা বিশ্বের বড় বড় নেতাদের দিক পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই যে, অনেকেই আছেন যারা তাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, নানা ত্যাগ স্বীকার করছেন, অনেক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন এবং আন্দোলনের দাবি আদায়ে সফলও হয়েছেন। তবে কেউ দেশকে পরিচালনা করেছেন আবার কেউ দেশ নির্মাণে কাজ করেছেন। যেমন, বিশ্বের নন্দিত রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে একজন লেনসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণভিত্তিক গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আফ্রিকাকে বর্ণবাদ থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং আফ্রিকা থেকে বর্ণবৈষম্য বিলুপ্ত করেছেন। তবে তিনি একটি জাতি রাষ্ট্রের জন্ম দেননি।

মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা তিনি।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক দাঙ্গা সৃষ্টি হলে তিনি সমাধানের প্রস্তাব দেন। একই সাথে তিনি আজীবন অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভারত স্বাধীন হয়েছে। তবে তিনিও রাষ্ট্র পরিচালনা করেননি।

ভারতের স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহেরু একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অভিজ্ঞ নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু । তবে শেষ পর্যন্ত এই কিংবদন্তি নেতাও দেশ পরিচালনা করতে পারেননি।

এছাড়াও পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দুটি পৃথক জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন ঠিকই, তবে তিনি এক বিতর্কিত রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন। 

এরকম বিশ্বজুড়ে আমরা যত নেতৃত্বই দেখি না কেন সেই নেতৃত্বগুলোর পরিপূর্ণতা নেই। কেউ দেশ স্বাধীন করেছে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা করেননি। আবার কেউ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন কিন্তু স্বাধীন দেশ নির্মাণ করেননি। একটা রাষ্ট্র বা জাতিসত্ত্বার যে বৈশিষ্ট্য আছে সেটা করে যেতে পারেননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি, একদিকে একটা জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন, একটা জাতি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন এবং জাতি, রাষ্ট্র কিভাবে চলবে তার একটার রূপ পরিকল্পনা দিয়েছেন। 

১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনের একমাত্র নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যা করতে বলেছেন, আর যা করতে নিষেধ করেছেন সেভাবেই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। সে জন্যই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের শুরুতেই বলেছিলেন যে, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই’। তিনি লোকরঞ্জক নেতা ছিলেন না, তার রাজনীতি ছিল মানুষলগ্ন। জনগণের স্বপ্ন নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে, জনগণ এবং নিজেকে সমন্বিত করে স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মন্ত্র। সে মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল।

এমনকি দেশের দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর রাজনৈতিক ব্রত থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। সদ্যস্বাধীন দেশে গরিবের হক কেড়ে খাওয়া ‘চাটার দল’-এর বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন কষ্টকর, তা রক্ষা করা তার চাইতেও কঠিন। দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।’

এছাড়াও শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি যে সম্ভব নয়, তা অনুধাবন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি একটি শিক্ষিত জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন। শোষণ মুক্ত ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষা ব্যবস্থাও। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করছে। শিশুদের যথাযথ শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটলে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হবে।

আজ ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। তিনি নিজের জন্মদিন কোনোদিনও পালন করেননি। তার বক্তব্য থেকেই সেটি স্পষ্ট হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার জন্মদিন পালন করি না। যে জাতি অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটায়, কথায় কথায় গুলি করে হত্যা করা হয়, সে জাতির নেতা হিসেবে আমি জন্মদিন পালন করতে পারি না।’ এই উদ্বেগ তখনই নেওয়া সম্ভব, যখন একটা মানুষ তার দেশ আর দেশের মানুষকে ভালোবাসেন।

এভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশকে পরিচালনা করেছেন। মানুষের সুখে দুঃখে সবার পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। শুধু রাজনৈতিক দিকেই নয়, দেশের সকল সমস্যায়, সকল কাজেই তার অবদান অভিন্ন এবং অনন্য।  

বাংলাদেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একজনই জন্মেছিলেন। যার জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না। যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে, তাদের মাঝেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন চিরকাল



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭