ইনসাইড পলিটিক্স

পরশ-তাপস বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ


প্রকাশ: 17/03/2024


Thumbnail

শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির দুই পুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে বিরোধ মেটানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনকে ঘিরে পরশ এবং তাপসের বিরোধ এখন তুঙ্গে। এই বিরোধ দলের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে সংগঠনের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া শেখ মনি পরিবারের ওপরও এটি বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও মনে করছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল। আর কারণেই এই বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি দুই ভাইয়েরই অভিভাবক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দুই ভাই তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তার কথা সাধারণত অমান্য করেন না। 

উল্লেখ্য যে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে দুই ভাইয়ের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেই। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, পরশ এবং তাপসের বিরোধ অনেক পুরনো। তবে পুরনো বিরোধ হলেও, এ বিরোধের মূল কারণ হলো নাহিদ সুলতানা যুথী। পরশের স্ত্রী নাহিদ নাহিদ সুলতানা যুথীকে নিয়েই তাপস এবং পরশের বিরোধের সূত্রপাত বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো দাবি করছে। 

এর আগেও এ বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার পারিবারিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছিল, মীমাংসা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিরোধের কুল-কিনারা হয়নি। গতবারও নাহিদ সুলতানা যুথী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে তাপসের ভূমিকাই প্রধান ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করে।

এবারও নাহিদ সুলতানা যুথী মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পাদক পদে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে যুথি নিজে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর পিছনে পরশেরও সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে। পরশ-যুথি দুজনই মনে করে যে, এ মনোনয়ন না দেয়ার ক্ষেত্রে তাপসই  প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। নিজের ভাবির প্রতি তাপসের এই আচরণ মেনে নিতে পারেনি যুথি এবং পরশ। এখানেই এই বিরোধ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে। 

এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নাহিদ সুলতানা যুথীর পক্ষে যুবলীগ করা সকল আইনজীবী যুক্ত ছিলেন। নির্বাচনের ভোট গণনার দিন তারাই এ কান্ড ঘটিয়েছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। যদিও পরশ এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ঘটনার বেশ কিছুদিন পর এর ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দাবী করেন। যুবলীগের কেউ যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করারও আশ্বাস দেন। কিন্তু নির্বাচনের পরপর নাহিদ সুলতানা যুথী সমর্থকদের সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং যুথিকে নির্বাচিত ঘোষণা করার প্রতিবাদে পরদিন মামলা দায়ের করা হয়, এবং যে মামলার প্রধান আসামী নাহিদ সুলতানা যুথী। এ মামলায় অন্য আসামীরা গ্রেপ্তার হলেও যুথিকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার না করে বিষয়টি এখন সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চলছে এবং মামলাও তুলে নেওয়া হবে। যারা এখন গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদেরকেও জামিনে মুক্ত করে একটি সমঝোতার পথ খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে এ সমঝোতাটি আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক সে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে কথা রয়েছে। একই মামলায় প্রধান আসামী বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছন এবং অন্য আসামীরা জেলে এ বিষয়টি আইনের সাম্যতার পরিপন্থী বলে অনেকে মনে করেছেন। তবে স্পর্শকাতর এ বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন নেতা মন্তব্য করতে চাননি। 

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন যে, পুরো বিষয়ে এখন পরশ এবং তাপসের মধ্যে একটি মীমাংসা এবং সুপ্রিম কোর্টে অনভিপ্রেত একটি ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই এর সমাধান হবে বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতা জানিয়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭