ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের পরাজিত নেতাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত


প্রকাশ: 17/03/2024


Thumbnail

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা পরাজিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে অনেক জায়গায়। সেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চমক সৃষ্টি করেছেন। এই সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের রাজনীতির ভবিষ্যত কি—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম বিচার বিশ্লেষণ চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এবার নির্বাচনে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পরাজিত হয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত। এদের ঘুরে দাঁড়ানো বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা, দলের ভিতরে প্রভাব বিস্তার করা কিংবা দলে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। সামনের দিনগুলোতে তারা রাজনীতিতে আরও কোণঠাসা অবস্থায় চলে যাবেন। এমনকি কারও কারও রাজনীতির যবনিকাও দেখা যেতে পারে। আওয়ামী লীগের যে সমস্ত হেভিওয়েট নেতা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। কাজী জাফরউল্লাহ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারও। কিন্তু এই নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। এর ফলে একদিকে যেমন তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, অন্যদিকে তিনি আদৌ নির্বাচন করার যোগ্য কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। আর এ কারণেই কাজী জাফরউল্যাহর রাজনীতিতে অনেকে যবনিকা দেখছেন। 

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবার নির্বাচনে মাদারীপুর থেকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি বাড়ি বিতর্কে ছিলেন। তার বাড়ির বরাদ্দ বাতিল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী না হয়েও, কোন পদে না থেকেও তিনি মন্ত্রীদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ছিলেন। নানা রকম বিতর্কের কারণে আবদুস সোবহান গোলাপ এমনিতেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজয়ের ফলে তার জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও নির্বাচনকে নিয়ে তিনি নানারকম বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। যা দলের হাইকমান্ড পছন্দ করেনি। আবদুস সোবহান গোলাপ এক সময় আওয়ামী লীগের খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তাকে অনেক সমীহ করত। কিন্তু এবার নির্বাচনে পরাজয় এবং সরকারি বাড়ি দখল করে রাখার কাণ্ডে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে হলে তাকে নাটকীয় কিছু করতে হবে। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।

মৃণাল কান্তি দাস আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক। মৃণাল কান্তি দাস আওয়ামী লীগের একজন দুঃসময়ের নেতা। আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মধ্যে একজন। এবার নির্বাচনে তিনি মুন্সীগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ করা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচনে হারার পর প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মৃণাল কান্তি দাস প্রায় ২৫ মিনিটের মতো বক্তৃতা প্রদান করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্য শুনেছেন। মৃণাল কান্তি দাস এর কেউ যবনিকা দেখছেন না। বরং এই নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি সংগঠনে আরও বেশি মনোযোগী হবেন এবং নির্বাচনের রাজনীতি ছেড়ে সাংগঠনিক রাজনীতিতে মনোনিবেশ করবেন বলে অনেকে মনে করছেন।

অসীম কুমার অকিল এবার নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এই পরাজয়ের ধাক্কা সামলে তিনি এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হচ্ছেন। ভবিষ্যতে নির্বাচনের রাজনীতিতে অসীম কুমার অকিলের খুব একটা সম্ভাবনা দেখছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে সাংগঠনিক কাজে তিনি আগের মতোই সরব থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭