ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাশিয়া, ইরান ও চীন যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে বাণিজ্যবলয় গড়ছে


প্রকাশ: 19/03/2024


Thumbnail

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি  উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। যদিও, তারা খুব একটা ভ্রমণ করেন না কিন্তু সম্প্রতি উভয়ই চীন সফর করেছেন। পরস্পরের প্রতি তাদের ভালো লাগা ও ভালোবাসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। 

গত ডিসেম্বরে তারা গাজার যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় ক্রেমলিনে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এরপর রাশিয়ার নির্বাচনে পুতিন আবারও নির্বাচিত হলে রাইসি বিলম্ব না করে পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

ইতিহাসের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাশিয়া, ইরান ও চীনের মধ্যে তেমন একটা বন্ধুত্ব ছিল না। ভেতরে ভেতরে এরা সাম্রাজ্যবাদী। প্রায়ই এমন হতো যে এরা পরস্পরের প্রতিবেশী দেশগুলোয় হস্তক্ষেপ করত এবং এশিয়ার বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করত। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে সবকিছু বদলে গেছে। 

এদিকে, বারাক ওবামার জমানায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিতকরণ সংক্রান্ত চুক্তি করেছিল, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এর দুই বছর পর জো বাইডেন আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন; এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থনের জন্য ইরানের বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় যুক্তরাষ্ট্র। দ্য ইকোনমিস্ট এর খবর 

২০২২ সালে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞার গেরো আরও কঠোর হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা লেগেই আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিষেধাজ্ঞা বরং আরও জোরালো হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় এই দেশ তিনটিও একইভাবে অভিন্ন শত্রুর দ্বারা একত্র হয়েছে। ফলে তাদের পররাষ্ট্রনীতি এখন অভিন্ন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যহীন বহুপক্ষীয় বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। নতুন এই জোটের ভিত্তি হিসেবে তারা মনে করছে, নিজেদের অর্থনৈতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে।

রাশিয়ার সঙ্গে  চীন বন্ধুত্বের অঙ্গীকার করেছে। এখানেই শেষ নয়, ইরানের সঙ্গে তারা ২৫ বছরের ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি ডলারের ‘কৌশলগত অংশীদারি’ ঘোষণা করেছে। চীন ও রাশিয়া ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এবার ইরানও সদস্যপদ পেয়েছে। এই তিন দেশের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ছে। এখানেই শেষ নয়, তারা শুল্কমুক্তভাবে পণ্য বাণিজ্যের জন্য ব্লক গঠনের পরিকল্পনা করছে। সেই সঙ্গে অর্থ পরিশোধের নতুন ব্যবস্থা ও পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যপথ এড়িয়ে নতুন পথে বাণিজ্য করার পরিকল্পনা করছে।

মার্কিনিদের কাছে এসব পরিকল্পনা দুঃস্বপ্নের মতো। এ রকম পশ্চিমবিরোধী অক্ষ গঠিত হলে তাদের শত্রুরা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সুযোগ পাবে। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে এই দেশগুলো ঠিক কোথায় যাবে, সেটাই এখন তাদের বড় প্রশ্ন।

জ্বালানি কিনছে চীন

রাশিয়া ও ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রেতা সব সময়ই চীন । তবে এই দেশ দুটি একই সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকায় বিপুল পরিমাণে তেল বিক্রি করত। ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে ইউরোপের সঙ্গে তাদের তেলের বাণিজ্য চাঙা ছিল। কিন্তু ইউরোপ রাশিয়া ও ইরানের তেল নেওয়া বন্ধ করার ফলে চীন রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় ব্যারেল ব্যারেল তেল কিনছে। যুদ্ধের আগে রাশিয়ার বন্দর দিয়ে চীন দিনে এক লাখ ব্যারেল তেল কিনত কিন্তু এখন তা দিনে পাঁচ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে। 

বাণিজ্য বাড়ছে

দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে চীনের যেমন তেল কেনা বেড়েছে, তেমনি রাশিয়াতেও চীনের রপ্তানি বেড়েছে। কোভিড-১৯-এর কারণে চীনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা জুতা বা টি-শার্ট রপ্তানির বদলে উচ্চ মূল্যের যন্ত্রপাতি রপ্তানিতে মনোযোগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া তাদের পরীক্ষণ ভূমি বা বাজার। গত বছর চীনের গাড়ি রপ্তানিতে ইউরোপ নয়, শীর্ষ গন্তব্য ছিল রাশিয়া।

রাশিয়া বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে দেশটি যত পেট্রলভিত্তিক গাড়ি আমদানি করত, গত বছর আমদানি করেছে তার তিন গুণ।

তবে কাঁচামালের অভাবে ইরানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যদিও দেশটির উৎপাদন খাত পেট্রোলিয়াম খাতের মতোই বড়। চীনের কাছ থেকে দেশটি এখনো তেমন একটা আমদানি করছে না। কিছু যন্ত্রপাতি আর মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ গাড়ি, যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ ইরাকে চীন প্রতি মাসে তিন হাজারের মতো গাড়ি রপ্তানি করে। চীনের বড় রপ্তানিকারকেরা যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার সাহস পাচ্ছে না বলে সংবাদে বলা হয়েছে।

তবে মূলকথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নীতির কারণে রাশিয়া, ইরান ও চীনের সম্পর্ক গভীর হচ্ছে। যদিও তারা নিজেদের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য করতে পারবে, তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এখনো অনেক বিষয়ের সমাধান তাদের করতে হবে। কিন্তু তাদের সম্পর্ক যেদিকে যাচ্ছে, তাতে এসব সমস্যা তারা হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭