ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মরক্কোবাসীর রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি


প্রকাশ: 20/03/2024


Thumbnail

প্রথাগত ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজও তোপধ্বনি শুনে ইফতার ও সেহরি করেন মরোক্কোবাসীরা। প্রথমবার তোপধ্বনি দিয়ে জানান দেওয়া হয় সেহরির সময়। আর দ্বিতীয় তোপধ্বনির মানে হলো, সেহরির সময় শেষ। এরপর ইফতারের সময়টিও জানিয়ে দেওয়া হয় কামানের গোলার আওয়াজে।

শুধু তাই নয়, সেহেরিতে দেশবাসীকে জাগিয়ে তুলতে  মাথায় টুপি, পায়ে জুতা আর মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে সুরেলা গলায় প্রার্থনা সংগীত গেয়ে 'নাফর' দল হেঁটে চলেন শহরের অলিগলিতে। রাস্তায় হাঁটার সময় নফররা গান গাওয়ার পাশাপাশি শিঙাও বাজিয়ে থাকেন। এ রীতিও বহন করে চলছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিশ্বাস ও ঐতিহ্য।

বাংলা ইনসাইডার আয়োজিত 'ইনসাইড রমজান' ধারাবাহিক এর আজকের পর্বে আমরা জানবো মরক্কোতে মুসলিমদের রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি- 

অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মতো মরক্কোতেও রমজান মাসে প্রতি রাতে তারাবি ও মধ্যরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। আর দেশটির রমজানের আরেক অনুষঙ্গ হলো ঐতিহ্যবাহী টুপি–ফেজ। প্রতি রমজানেই ফেজ কেনেন পুরুষরা। এ মাসে তারাও পবিত্র কোরআন খতম দেন।

মরক্কোতে রমজান মাস পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করার এবং সামাজিকতা রক্ষার সুযোগ করে দেয়। একই পরিবারের বিবাহিত সদস্যরা রমজানের শুক্রবারগুলোতে পারিবারিক বাসভবনে এক হয়। এই বাসভবনকে ‘বড় বাড়ি’ বলা হয়। 

রমজানে আরেকটি সুন্দর ঐতিহ্য রয়েছে দেশটিতে বাবা-মা প্রথম রোজা সন্তানদের জন্য পালন করেন। এ দিন দুধ, খেজুর এবং শুকনো ফল ছাড়াও মরক্কোর সুস্বাদু খাবারের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ইফতার তৈরি করা হয়। 

মরক্কোর আরেকটি রীতি হলো রমজানের ২৬তম রাতে লা্লইতুল কদর পালন। এ উপলক্ষে তারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন এবং ঘোড়ার প্যারেড আয়োজন করা হয়। 

ঐতিহ্যবাহী খাবার

মরক্কোর খাবার বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। দেশটিতে ইফতার করা হয় বেশ জাঁকজমকের সাথে। এখানে, ইফতারকে বলা হয় ‘এফতোর’। এই ‘এফতোর’ এর খাবারের আয়োজন নিয়ে রমজান মাসে দেশটির রাস্তাগুলোতে খাবারের বাজার বসে।

আর, ঘরোয়া পরিবেশে মায়েরা বাহারি ধরনের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার তৈরি করেন এই মাসে। বাড়ির ভাঁড়ার ঘরগুলো থাকে নানা মজার খাবারের উপকরণে ঠাসা। মরক্কোবাসীর মধ্যে পারিবারিক বন্ধন চোখে পড়ার মতো। সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করে।

ইফতারে থাকে দেশটির ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবার। যেমন- ক্রাচেল, হারিরা, ব্রিওয়াত, ছোট আকারের স্টিল্লা, স্যাল্লো, রিজ্জা, মিস্সামেন, মালবি, বাঘরির, হারশা এবং কুসকুস। একসাথে তিন থেকে চারটি টেবিলে এই খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে মরোক্কানরা ইফতার করেন। এ সময় তারা কোরআন তিলাওয়াত শুনেন অথবা গল্প করেন। এবং মহিলারা নানা ধরনের খাবারের রেসিপি আদান-প্রদান করেন।

মাগরিবের নামাজের পর তারা ‘হারিরা’ নামের ঐতিহ্যবাহী স্যুপ খান। স্যুপ জাতীয় ‘হারিরা’ মজাদার ও পুষ্টিকর খাবার । সারাদিন রোজা রাখার পর এই খাবার রোজদারদের জন্য খুবই উপযোগী। এটি ইফতারেই বেশি জনপ্রিয়। তার সঙ্গে থাকে মধু দিয়ে তৈরি পাউরুটি ‘ক্রাচেল’ বা সুজি দিয়ে তৈরি নোনতা ঝুরি রুটি ‘হারশা’।

এরপর, তারাবিহ নামাজের পরে প্রধান খাবার পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‘তাজিন’ এবং ‘কুসকুস’।

ইবাদত 

রমজানের ২৭তম রাতে ঐতিহ্যগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদরের জন্য সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করা হয়। সে অনুযায়ী বেশির ভাগ মরোকনই ঐতিহ্যবাহী এ নামাজ খুব গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করে থাকেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সারারাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটান। অধিক ইবাদতের জন্য অনেক মরোকনের নতুন ঐতিহ্যবাহী জেল্লাবাস গ্রহণ করে থাকেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭