এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের অনাহূতরা


প্রকাশ: 20/03/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী তারা। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কঠিন সময়ে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কখনও পিছপা হতে দেখা যায়নি। আদর্শের প্রশ্নে তারা কখনও আপস করেননি। কিন্তু তারপরেও আওয়ামী লীগে অনাহূত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা জায়গা পান না, এমপি হতে পারেন না। মন্ত্রিসভা তো অনেক দূরের কথা। অথচ তাদের চেয়ে কম উজ্জ্বল নেতারা এখন মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। দলে এবং সরকারে প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাদের কি অপরাধ কেউ জানে না। অথচ কর্মীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়েই তারা থাকতে চান এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। হৃদয়ে ক্ষোভ হতাশা থাকলেও মুখে তাদের হাসি থাকে। তারা তাদের দুঃখ হতাশার কথা কাউকে বলেন না।

এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের কথা সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে রয়েছেন;

লিয়াকত শিকদার: লিয়াকত শিকদার ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী। দুঃসময়ে একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেখ হাসিনার প্রশ্নে তাকে কখনও আপোষ করতে দেখা যায়নি। কর্মীদের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও লিয়াকত শিকদার আওয়ামী লীগে অনাহূত।

ইসহাক আলী খান পান্না: ইসহাক আলী খান পান্না ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সভাপতি এনামুল হক শামীম মন্ত্রী-এমপি হলেও ইসহাক আলী পান্নার কপালে কিছু জোটেনি। কি তার অপরাধ কেউ বলতে পারে না। 

মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী: মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। একজন পরিচ্ছন্ন মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। কিন্তু মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী এখন অপাংক্তেয়। তাকে কোথাও দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও তিনি নেই। সংসদ সদস্য হিসেবেও তার তিনি জায়গা পাননি। আর মন্ত্রী হওয়া তো অনেক দূরের কথা। মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর অপরাধ কি কেউ বলতে পারে না। তার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছিল, তার যারা অনুগত কর্মী ছিল তাদেরও কেউ কেউ এখন মন্ত্রী হয়েছেন, অনেকেই এমপি হয়েছেন। কিন্তু মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী সেই জায়গাতেই রয়ে গেছেন।

বাহাদুর বেপারী: আওয়ামী লীগের আরেকজন মেধাবী ছাত্র নেতার নাম বাহাদুর বেপারী। বিভিন্ন সময় তার মেধা এবং যোগ্যতা নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে চর্চা হয়। ছাত্রলীগের যে কয়েকজন মেধাবী নেতা এসেছিলেন, তাদের মধ্যে বাহাদুর বেপারী অন্যতম। কিন্তু বাহাদুর বেপারীও এখন আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন। তিনিও এখন প্রায় অনাহূত। তাকে নিয়েও এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে খুব একটা চর্চা হয় না। বাহাদুর বেপারী ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বড় ধরনের লিড পাবেন বা তার তিনি পাদপ্রদীপে আসতে পারবেন এমনটিও মনে করেন না অনেকে।

অজয় কর খোকন: অজয় কর খোকনও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী এবং কঠিন সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু অজয় কর খোকনও এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অপাংক্তেয়। তার কমিটিতে থাকা অনেকেই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু অজয় কর খোকন যেন পরিত্যক্ত বাসের মতো আওয়ামী লীগে অপাংক্তেয় হয়ে আছেন।

দুঃসময়ের এসমস্ত ছাত্রলীগের নেতাদেরকে কেন টেনে তোলা হচ্ছে না, কেন তারা পরিত্যক্ত অবস্থায়, অনাহূত অবস্থায় আছেন এটি আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন। তবে এদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও যারা ছাত্রলীগ করে এসেছেন, এখন ভালো জায়গায় আছেন তারাও খুব একটা কথা বলতে রাজি হননা। কারণ পাছে তাদের নিজেদের সুবিধাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেউই এ সমস্ত অনাহূত, ত্যাগী, পরীক্ষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের জন্য কথা বলতে আগ্রহী নন। কেন? সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭