ইনসাইড বাংলাদেশ

‘ভাইরাল’ প্রবণতায় বর্তমান প্রজন্ম


প্রকাশ: 22/03/2024


Thumbnail

"ভাইরাল" শব্দটি প্রধানত ইন্টারনেটে প্রচলিত হওয়া কিছু কন্টেন্ট বা তথ্য নির্দেশ করে, যা উচ্চ জনপ্রিয়তা এবং সামাজিক মাধ্যমে একটি দ্বিধা সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমান প্রজন্ম বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা এই ভাইরাল আসক্তে পরিণত হচ্ছে ক্রমাগতভাবে। যুগ যত প্রযুক্তির দিকে এগুচ্ছে প্রজন্ম তত ভাইরালের প্রবণতায় আসক্ত হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে তরুন তরুনী, শিশু কিংবা কিশোর-কিশোরীদের ভবিষ্যৎ পথচলা।

সাধারণত অনলাইনে সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর সেই মাধ্যমেই ভাইরাল হতে চায় তরুণরা। কারণ তরুণরা তাদের কৌশল, উদ্দীপনা, অথবা সৃজনশীলতা প্রদর্শন করতে চান। ভাইরাল হওয়ার মাধ্যমে তারা সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট, এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রভাবশালী সামাজিক মাধ্যমগুলো মনে করে তারা পরিচিত বা ভাইরাল হচ্ছে। হতে পারে এটা মজার ছবি, উদ্ধারণ, ভিডিও, অথবা অসাধারণ ঘটনা। আর এই ভাইরালই সামাজিক যোগাযোগ মাধমের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে দ্রুতগতিতে প্রচারিত হয়। যা ওই ব্যক্তি, বা গোষ্ঠী কিংবা সমাজকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।

তথ্য বলছে,  বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যার মধ্যে বিশেষ করে রয়েছে, ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার, ইন্সট্রগ্রাম, গুগল, লিঙ্কডিন ইত্যাদি। আর এসব মাধ্যমগুলো ব্যবহারের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ১৫-৩০ এর। তাদের জগতের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা। ইন্টারনেটের কোন এক কোনায় কেউ কিছু লিখল বা তৈরি করল কোন ছবি বা ভিডিও। তা রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ল বিভিন্ন সাইটে, অনেক মানুষ তা দেখল, পছন্দ করল কিংবা অনেক বেশি সমালোচনার ঝড়ে মাতল।  

দেখা যায়, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ মানবীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দূরত্বকে পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম হয়েছে। এই যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও আইফোনের মাধ্যমে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি তথ্য, মতামত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারে। এগুলো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রাণ। তার মানে এই নয় যে এগুলোকে ব্যবহার করবে আসক্ত হয়ে। যা কিনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঠিক পথে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।

সচেতন মহল একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবে, এই ভাইরালের পিছনে কিশোররাও ছুটছে। তারা ভাইরাল হতে অস্বাভাবিক আচরণ, চলাফেরা করছে। কিশোর কিশোরিরা দিন দিন আসক্ত হচ্ছে সামাজিক প্রযুক্তি মাধ্যমগুলোতে। কারণ তারা সামাজিক মাধ্যমে, ইন্টারনেটে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের পোস্ট, ছবি, অথবা ভিডিও শেয়ার করতে বস্তুত আগ্রহী হয়ে থাকে। তাদের আসক্তির সূচক হতে পারে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রফাইলের ফলোয়ার, লাইক, এবং শেয়ারের সংখ্যা, এবং তাদের তৈরি করা কন্টেন্টের ভিউ সংখ্যায়।

প্রজন্মের বেশিরভাগ তরুণতরুণী, কিশোরকিশোরী, এমনকি সমাজের কিছু অচেতন মস্তিস্কের মানুষ রয়েছে তারা  টিকটক ও লাইকির জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নিজেরদের পরিবার, আপনজন কিংবা নিজেদের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিচ্ছে। বলা চলে একরকম জনপ্রিয়তা নিয়ে এটাকে সুযোগ মনে করে কাজে লাগায় কমবয়সী মেয়েদের উপরে। একরকম প্রলোভন দেখিয়ে বলা হয় তাদেরকে টিকটক 'স্টার' বানিয়ে দেওয়া হবে। পরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো, পাচার, ধর্ষণ, আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কিছু করাতে বাধ্য করা, এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। অথচ অনেকগুলো বছর ধরে কেউ জানতেই পারেনি, কীভাবে মেয়েরা প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন।

এমনকি এই ভাইরালে ঘটতে পারে সমাজের ক্ষতি। যেমন মিথস, ভুল তথ্য, অমিল বা প্রতারণামূলক কন্টেন্ট প্রচার হতে পারে। এতে অসত্য তথ্যের বিস্তারিত ছড়াতে পারে, সামাজিক বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে এবং অসুস্থ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে যা বর্তমান প্রজন্মের ভবিষ্যতের সঠিক জীবন পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হতে পারে বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকরা। আর তাই সঠিক তথ্য, সৃজনশীল কন্টেন্ট এবং সতর্কতার মাধ্যমে এই ক্ষতি কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭