ইনসাইড বাংলাদেশ

উন্নত জীবন ও জীবিকার জন্য নিরাপদ পানি অপরিহার্য


প্রকাশ: 22/03/2024


Thumbnail

উন্নত জীবন ও জীবিকার জন্য নিরাপদ পানি অপরিহার্য কিন্ত আমরা সুপেয় পানির দেশ হলেও পানির অধিকার থেকে আমরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছি।

শ্রক্রবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবসের গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘের বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দের যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে দশটায় এক গোলটেবিল বৈঠক পরিজার সভাপতি প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। 

গোলটেবিলে আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডাঃ মোস্তাক হোসেন, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল এন্ড কলেকের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্য সচিব মাহবুল হক, পরিজার সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হাসান মাসুদ, সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট তানইয়া নাহার, মো: সেলিম, হোসনে আরা বেগম রাফেজা, মো: ইব্রাহিম, সীমান্ত সিরাজ প্রমূখ।

পরিজা সভাপতি প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। পানি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন পানির ঘাটতি, দূষণ, নিরাপদ পানির অধিকার, স্যানিটেশন সমস্যা এবং সংরক্ষণ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরতে বিশ্বব্যাপী মানুষ এই দিনটি পালন করে। বিশ্ব পানি দিবস জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান। যার লক্ষ্য পরিবেশের জন্য বিশুদ্ধ পানির গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। পানি আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলির মধ্যে একটি এবং আমাদের খাদ্য উৎপাদনসহ পৃথিবীতে জীবনের জন্য একেবারেই অপরিহার্য। নদী, হ্রদ বা সমুদ্র যাই হোক না কেন, এটি বাস্তুতন্ত্র, কৃষি, শিল্প এবং মানুষের কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। এবছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শান্তির জন্য পানি’। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে বিশ্বজুড়ে পানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে এবছরের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশ্ব পানি দিবসের বার্তায় শান্তির জন্য পানি ব্যবহার এবং আন্তঃসীমান্ত পানি সহযোগিতার জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে ২.২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত এবং এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৩০শতাংশ বেড়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বে কৃষি খাতে ৭০শতাংশ যার বেশির ভাগই সেচ কাজে, শিল্প খাতে ২০শতাংশ বিশেষ করে জ্বালানী ও উৎপাদনে, গৃহস্থালি কাজে ১০শতাংশ যার এক শতাংশেরও কম সুপেয় পানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পানি পাওয়া মানুষের অধিকার। পানি শান্তি সৃষ্টি করতে পারে আবার সংঘাতও সৃষ্টি করতে পারে। যখন পানির অভাব হয় বা দূষিত হয়, অথবা যখন মানুষের প্রবেশাধিকার থাকে না, তখন সম্প্রদায় এবং দেশগুলির মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে। আমাদের সবচেয়ে মূল্যমান সম্পদ সংরক্ষণের জন্য একসাথে কাজ করার জরুরী প্রয়োজন রয়েছে। পানির বিষয়ে সহযোগিতা সকল শেয়ার্ড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করে। সকলের জন্য আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে আমাদের অবশ্যই পানিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোস্তাক হোসেন বলেন, পানি আমাদের জন্য একটি প্রধান প্রয়োজনীয় উপাদান এবং তা সকল প্রাণ ও প্রকৃতির জন্যও। কিন্তু নিরাপদ পানি অভাবে হাজারো সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানব শরীরের কিডনী, লিভার, হার্টসহ নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। নিরাপদ পানির অভাবে ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ পেটের সমস্যা সহ নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের জীবনের জন্য পানির যে সংকট তা কেবল দেশের মধ্যে সীমাবন্ধ নয় এই সমস্যা একটি বৈশি^ক সমস্যাও।  

অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, আমাদের দেশের জলাশয়গুলো ধ্বংস করা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। আমাদের জীব বৈচিত্র্যও ধ্বংস হয়েছে পানির নিরাপদ আধারগুলো না থাকার কারণে। আমাদের গ্রাম ও শহর তার কৃষি ও প্রতিবেশ বিনষ্ট হয়েছে পানি সংকটের কারণে। নদীগুলো যে পানি প্রবাহ নেই তার কারণ আন্ত:দেশীয় পানির হিস্যা না পাওয়ার কারণে।

পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। সকালবেলায় বস্তির মানুষেরা এক কলসি পানির জন্য এই শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে যা তাদের জীবন জীবিকাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলছে। সরকারকে এই প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্য সচিব মাহবুল হক বলেন, পানি জনগণের অধিকার এবং মানবাধিকার। এই অধিকারকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকলকে একযুগে কাজ করতে হবে। একটি রোডম্যাপ করে দেশব্যাপী পানির অধিকারের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা বলেন, আমরা বস্তিবাসীরা পানি পাইনা আর পানির অপচয় দেখি সর্বত্র। বস্তির মানুষ সবচেয়ে বেশি পানির টাকা প্রদান করে কিন্তু তাদের সবচেয়ে করুণ জীবন যাপন করতে হয় পানির অভাবে।

বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ পর্যবেক্ষণ এবং পানি গুণাগুণ পরীক্ষাকরণ ও পানি পরীক্ষার ফলাফল

গোলটেবিলে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে ১৭ ও ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখে বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ পর্যবেক্ষণ এবং ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে তার প্রতিবেদন তুলে ধরে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)। সেখানে দেখা যায় সদরঘাট টার্মিনাল (১৩নং পন্টুন) থেকে শ্যামপুর বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল পর্যন্ত দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডি ও) ০.১৪ - ০.৭২ মিলিগ্রাম/লিটার এবং পিএইচ ৬.৭৯ - ৭.২৭। এ অবস্থায় নদীতে কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডি ও) ৪ মিলিগ্রাম/লিটার থাকা প্রয়োজন। নদীর পরিবেশ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে দ্রবিভূত অক্সিজেন (ডি ও) ০.১৪ - ০.৭২ মিলিগ্রাম/লিটার।

গোলটেবিল থেকে নিম্নোক্ত সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়:

 ১.ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২. অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা।
৩. ঢাকার আশেপাশের নদীসহ অন্যান্য সকল নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, লেক, দিঘী-পুকুর, নিম্নাঞ্চল, জলাভূমি দখল, ভরাট ও দূষণ বন্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. নদী দূষণমুক্ত করা। নদীর পানি কৃষি ও শিল্পে এবং পরিশোধন করে খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার করা।
৫. খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষ করা। প্র্রকৃতি নির্ভর ধান চাষে গবেষণা জোরদার করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা।
৬. নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখার লক্ষ্যে নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রীজের পরিবর্তে ঝুলন্ত ব্রীজ বা টানেল নির্মাণ করা।
৭. নিরাপদ পানি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
৮. শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত পানি পুনর্ব্যবহার করা।
৯. ভূগর্ভে কৃত্রিম রিচার্জ করা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায়।
১০. ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রাপ্য ন্যায্য স¤পদ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের আরো অধিকতর টেকসই জীবনযাত্রার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা।

 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭