ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতের নির্বাচন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কে কার পক্ষে


প্রকাশ: 22/03/2024


Thumbnail

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক এই রাষ্ট্রটিতে। আগামী ৪ জুন ভোটগণনা হবে এবং জানা যাবে ভারতের কারা সরকার গঠন করেছে। 

ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণের সেক্ষেত্রে ভারতের নির্বাচনের দিকে অনেকেই তাকিয়ে থাকে। বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে যেমন ভারতের আগ্রহ রয়েছে, তেমনই ভারতের নির্বাচনের ব্যাপারেও বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। পার্থক্য শুধু এইটুকুই ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ভারত যেহেতু বড় প্রভাবশালী দেশ এবং বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, সে কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং রাজনীতির গতি প্রকৃতি নির্ধারণে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে বিগত নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পালটানো ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলেই সব মহল বিশ্বাস করে। 

বাংলাদেশ ভারতের নির্বাচনে সেরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নানা রকম স্বার্থ এবং হিসাব নিকেশের আগ্রহ থাকে ভারতের নির্বাচন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেমন ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ধারণা করেছিল যে, বিজেপি যদি সরকার গঠন করে তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে। এই কারণে সেই নির্বাচনের সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই বিজেপিকে সমর্থন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে বিজেপি জয় পায় বটে কিন্তু তাতে বিএনপির কোনো উপকার হয়নি। বিএনপির নেতারা বিজেপির জয়ের পর মিষ্টি বিতরণ করলেও অচিরেই সরকার গঠন করে নরেন্দ্র মোদি আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন। 

বিজেপির এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত অঞ্চলে তাদের সুরক্ষা। ভারত মনে করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার এবং একমাত্র শেখ হাসিনাই সীমান্তে বাইরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রুখে দিতে সক্ষম। এ কারণেই ভারতের রাজনীতিতে একটি বৈপরীত্য এবং অসহিষ্ণুতা থাকলেও কংগ্রেস-বিজেপির মুখোমুখি অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও উভয় দল যে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত তার মধ্যে একটি হল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। দুটি দলই মনে করে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। বিশেষ করে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন, উগ্র মৌলবাদীদেরকে দমন করা এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নেই। 

আওয়ামী লীগ অবশ্য একটা সময় পর্যন্ত ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রতি দুর্বল ছিল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বিশেষ করে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে সহযোগিতা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার যে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা, সেটি দুটি রাজনৈতিক দলের সম্পর্কে প্রগাঢ় করেছে। এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে গেলে সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সম্পর্কটি আবেগের জায়গা। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কংগ্রেস বা বিজেপি কে ক্ষমতায় আসবে তা নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। বরং ভারতের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক সেটি চায়। 

তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে সাম্প্রতিককালে বিজেপির প্রতি একটি পক্ষপাত তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এবং নরেন্দ্র মোদির দৃঢ়তার কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকে মনে করেন বিজেপি ক্ষমতায় আসাই ভালো। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপির ব্যাপারে নেতিবাচক। তারা মনে করে যে, উগ্র মৌলিবাদের উত্থান ঘটছে ভারতে। তবে এবার বিএনপি ভারতের নির্বাচনের ব্যাপারে উদাসীন। তারা এটি বুঝে ফেলেছে যে, ভারতে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, বিএনপির প্রতি নয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭