ইনসাইড বাংলাদেশ

রাজধানীতে পানির চরম সংকট, ভোগান্তিতে নগরবাসী


প্রকাশ: 23/03/2024


Thumbnail

একবার ব্যবহার করার পানি আবারও ব্যবহার করতে হয় থালাবাসন কিংবা গোসল করতে। অন্যান্য সময়ে পানির সংকট থাকলেও বিশেষ করে রমজানে পনির সংকটে ভয়ংকর অবস্থার মোকাবিলা করতে হয়। আশপাশের বাসার মালিকরা মিলে বারবার ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তারপরও পানির সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। পানি ছাড়া অসহায়ের মতো অবস্থা পুরো এলাকাবাসীর।’ রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রেবেকা সুলতানা এমনটাই বলে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

রাজধানীর অনেক এলাকাতেই রোজার মধ্যে পানির সংকট দেখা গেছে। রোজার শুরু থেকেই মিরপুর, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িল, ভাটারা, রামপুরা, মেরুল, ডিআইটি, মালিবাগ, বাসাবো, মুগদা, মাণ্ডা, লালবাগ, আজিমপুর, রায়েরবাগ, পুরান ঢাকা ও দক্ষিণখান এলাকায় পানির সংকট বেশি। এ ছাড়া নগরীর অনেক এলাকার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ দেখা যাচ্ছে।

রমজানে পানির অভাবে ইফতার, সেহরিসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। সারা দিন রোজা রেখে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা।

তবে ঢাকা ওয়াসার দাবি, রাজধানীতে পানির সংকট নেই। এলাকাভিত্তিক কিছু সমস্যা রয়েছে। তা সমাধানে কাজ করছে তারা।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রুমানা রাহমান বলেন, ‘পানি এলেও সঙ্গে বালু আসে। একাধিকবার ওয়াসায় অভিযোগ দিয়েছি। তারপরও সমস্যা সমাধান হয়নি। কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন হল লাইনে পানি আসছে না। গভীর রাতে অল্পস্বল্প যে পানি আসে তা দিয়ে হয় না। অনেক তদবির করে ওয়াসা থেকে গাড়ির পানি এনে কোনো রকম কাজ চলছে। তবে বড় গাড়ি চাইলে দেয় ছোট গাড়ি’।

পুরান ঢাকার বাড়ি মালিক আবদুল্লাহ আল হাসান বলেন, ‘৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানি একদম ব্যবহার করা যায় না বললেই চলে। পাশের একটি জায়গা থেকে পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। ওয়াসার পানিতে এতই দুর্গন্ধ যে, ফোটানোর পরও বিন্দুমাত্র কমে না। আগে ওয়াসার লাইনের পানি ফুটিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেত। তবে এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এ পানি নাকের কাছেই নেওয়া যায় না। খাওয়া বা রান্নার কাজে ব্যবহার তো দূরের কথা—এই পানি দিয়ে গোসলও করতে পারেন না এলাকার বাসিন্দারা’।

লালবাগের বাসিন্দা ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেন বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরে এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। ওয়ার্ডের মধ্যে আবদুল আজিজ লেন, ললিত মোহন দাস লেন, নবাবগঞ্জ রোড, হোসেন উদ্দিন খান প্রথম লেন, দ্বিতীয় লেন, সুবল দাস রোডসহ বেশ কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানি সংকট নিয়ে এলাকাবাসীর ফোনে অতিষ্ঠ বলে জানান তিনি’।

মালিবাগের শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা নীরব হোসেন বলেন, ‘সারারাত পানি থাকে না। আসে ভোরে। তখন যদি কোনো কারণে মিস করি তাহলে সারাদিন পানি ছাড়া থাকতে হয়। তাই চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকি কখন ওয়াসা পানি দেবে। ওয়াসার মডস জোনে যোগাযোগ করে পানি আনার ব্যবস্থা করছি। ৬০০ টাকার পানি অনেক সময় ১ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও চাহিদা মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না’।

মেরুল বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমার বাসাসহ আশপাশের এলাকায় পানি সরবরাহ নেই। পানি না থাকায় বাধ্য হয়ে আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি’।

এদিকে ঢাকা ওয়াসা সূত্র বলছে, পানির সংকট দেখা দিলে ঢাকা ওয়াসা গাড়ির মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে থাকে। সংস্থাটির মডস জোনে পানির গাড়ির চাহিদা জানানো হলে গাড়িতে করে পানি বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোন রয়েছে। প্রতিটি ছয় হাজার লিটারের বড় গাড়ির পানির দাম ৬০০ টাকা। তবে সিরিয়াল দিয়েও নির্ধারিত সময়ে পানি না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে নগরবাসীর। একই সঙ্গে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে।

ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে পানির সংকট হয়। এ সময় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কিছু জায়গায় গভীর নলকূপে উৎপাদন কমে যায়। এবার মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রমজান শুরু হওয়ায় পানির সংকট তীব্র হয়নি। এরই মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে।

ওয়াসা বলছে, ঢাকায় বর্তমানে পানির চাহিদা দৈনিক গড়ে ২৬০ কোটি লিটার। ওয়াসার উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৯০ কোটি লিটার পানি। অর্থাৎ ঢাকায় পানির যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে ওয়াসার উৎপাদন তার চেয়ে বেশি। কিন্তু সব এলাকায় রেশনিং করার ব্যবস্থা না থাকায় কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক এলাকায় পানির সংকট দেখা দিলে বা গভীর নলকূপ নষ্ট হলে আশপাশের এলাকা থেকে পানি এনে চাহিদা মেটানো হয়। একে ‘রেশনিং’ বলা হয়। ওয়াসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো এলাকায় পানির সমস্যা হলে ঢাকা ওয়াসার হটলাইন ১৬১৬২ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, সার্বিকভাবে ঢাকা শহরে পানির সংকট নেই। তবে, কিছু কিছু এলাকায় সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সেসবের জন্য কাজ করছি। আশা করছি, খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। কিছু স্ট্যান্ডবাই পাম্প চালু করা হয়েছে। যেখানে সমস্যা হচ্ছে সেখানে রেশনিং করে পানি দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি।

তবে, সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনো পূরণ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করা পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভস্থ থেকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭