ইনসাইড পলিটিক্স

‘ইন্ডিয়া আউট’ কেন বাংলাদেশে অবাস্তব


প্রকাশ: 23/03/2024


Thumbnail

মালদ্বীপের আদলে বাংলাদেশে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং ভারত বিরোধী একটি জনমত সৃষ্টি এই ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। মালদ্বীপে এই কর্মসূচি সফল হয়েছিল। মালদ্বীপে চীন পন্থী রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি দিয়ে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলো। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী মালদ্বীপ থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে একটি ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর এখন সেখানে চীন পন্থীদের জয়জয়কার চলছে। 

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যেও এক ধরনের ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরী হয়েছে। বিএনপির নেতারা মনে করছে ভারতই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছে। একারণেই বাংলাদেশেও ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি বাস্তবায়নের একটি নিবিড় চেষ্টা চলছে। যদিও বিএনপি প্রকাশ্যে এ কর্মসূচির মধ্যে নেই। কিন্তু নেপথ্যে থেকে বিএনপি এই ইন্ডিয়া আউট পরিকল্পনার কলকাঠি নাড়ছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি অসম্ভব এবং অবাস্তব। একাধিক কারণে এই বাস্তবতা সম্ভব নয়। 

১. ভারতীয় পণ্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা: বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের ওপর এক ঐতিহাসিক নির্ভরতা তৈরী হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ না আসলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হয়ে বেড়ে উঠে। ভারতীয় চাল না এলে চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। এ বাস্তবতা সম্পর্কে দেশের জনগণও ওয়াকিবহাল। আমাদের বাংলাদেশের একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় পণ্য বিলাসিতার জন্য নয় বরং বেঁচে থাকার জন্য ব্যবহার করতে হয়। কাজেই বাংলাদেশের বাস্তবতা মালদ্বীপের মতো নয়। এ কারণেই বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জন অবাস্তব এবং অসম্ভব। 

২. মালদ্বীপের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নয়: মালদ্বীপে যেভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিলো বাংলাদেশে বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ একটি কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে। ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখার জন্য যতটুকু কূটনৈতিক ভাবে যোগাযোগ করা দরকার ততটুকুই করে। কাজেই মালদ্বীপের ঘটনার সাথে বংলাদেশের ঘটনা মিলানো অবাস্তব পরিকল্পনা। 

৩. কোন পণ্যই এককভাবে ভারতীয় নয়: বিশ্ব বাস্তবতায় এখন ভারতীয় পণ্য বা মার্কিন পণ্য বলে কোন কিছু নেই। কোন পণ্যই এককভাবে কোন দেশের নিজস্ব নয়। বরং একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বহু দেশের কাঁচামাল, বহু দেশের প্রযুক্তি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্রিয়াশীল ভূমিকা থাকে। আর তাই কোন পণ্যকে একটি নির্দিষ্ট দেশের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। যেমন ধরা যাক, কোলগেট টুথপেস্টের কথা। এটি কোন ভাবেই ভারতীয় পণ্য নয়, এটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কাজেই ভারতীয় পণ্য বর্জন একটি অবাস্তব ধারণা এবং একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা ভাবনা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

৪. ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা: বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। বাংলাদেশের মানুষের ভারতের ওপরে যে চিকিৎসা নির্ভরতা তা অপরিসীম। সে কারণেই বাংলাদেশের জনগণ ভারত বর্জন নীতিতে কখনোই পা দিবেনা। তাছাড়া বাংলাদেশের যে আকাশ সংস্কৃতি, সে আকাশ সংস্কৃতিতে ভারত নির্ভরতা অনেক বেশি। ভারতীয় সিনেমা, ভারতীয় ওয়েব ফিল্ম, ভারতীয় টেলিভিশন না দেখলে মধ্যবিত্ত বাঙালিদের ঘুম হয়না। সেরকম পরিস্থিতিতে ভারতীয় পণ্য বর্জন করা হাস্যকর প্রস্তাব ছাড়া আর কিছুই নয়। 

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কটা একটা ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্কে গড়া। অতীতেও ভারত বিরোধীতা করেও জনগণকে যে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল এখন বিশ্ব বাস্তবতায় এবং তথ্য প্রযুক্তির কারণে ভারত বিরোধীতায় জনগণ এখন সেভাবে সাড়া দেয় না। বরং মানুষ মনে করে ভারতের সাথে যত সুসম্পর্ক থাকবে ততই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কাজেই ইন্ডিয়া আউট বাংলাদেশের বাস্তবতার ভিত্তি পাবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।    
     


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭