ইনসাইড পলিটিক্স

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে কি দায় এড়ানো যাবে?


প্রকাশ: 23/03/2024


Thumbnail

দ্রব্যমূল্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন দিশেহারা। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পণ্যের হঠাৎ হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তরমুজ নিয়ে যে তেলেসমাতি কারবার চলছে তাও সাধারণ মানুষকে সীমাহীন অস্বস্তি এবং বিরক্তি মধ্যে নিয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কেবল বড় বড় কথা বলা হচ্ছে, বিভিন্ন পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্ধারিত পণ্যে কোথাও জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে না। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক নতুন তথ্য আবিস্কার করেছেন। গত শুক্রবার তিনি দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির জন্য বিএনপির কারসাজিকে দায়ী করছেন। যে বিএনপি নিজেই আধমরা, যারা একটি আন্দোলন করতে পারে না, যারা তাদের নেতাকে মুক্তির জন্য কোন চেষ্টা করতে পারেন না, তারা দ্রব্যমূল্যকে অস্থির করে তুলবে এমন শক্তিশালী যদি বিএনপি হতই তাহলে তো বিএনপির এই অবস্থা হত না। 

১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির অবস্থা এতই নাজুক যে তারা নিজেদের একটি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক পর্যন্ত করতে পারে না। সম্মেলন পর্যন্ত করতে পারে না। তারা করবে পণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা! বিএনপির যদি এত ক্ষমতা থাকত তাহলে তো তাদের এই দুরবস্থা হত না। আওয়ামী লীগের কারও কারও মধ্যে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি আছে। যে কোনো দোষ বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় মুক্তির চেষ্টা করা, দায় এড়ানোর চেষ্টা করা। 

এর আগে একবার রানা প্লাজার ঘটনার সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিএনপি নেতারা ধাক্কা দিয়ে বিল্ডিং ভেঙে ফেলেছে। বিভিন্ন সময় আমরা দেখি যে, আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী কিছু নেতা এমন সব কাণ্ড করে বসেন যে কাণ্ডের জন্য তারা বিএনপিকে দায়ী করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ ধরনের কথাকে পছন্দ করে না, গ্রহণ করে না। 

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের প্রধান এজেন্ডা। নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগ অগ্রাধিকার খাতগুলো চিহ্নিত করেছিল, সেই অগ্রাধিকার খাতের অন্যতম হল দ্রব্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করা। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হিসাবে ঘোষণা করেছিল। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার প্রধান দায়িত্ব হল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন নবিশ প্রতিমন্ত্রীকে। তিনি চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু তার অভিজ্ঞতা সীমিত এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এমন কিছু অযোগ্য অথর্ব কর্মকর্তা রয়েছেন যাদেরকে দিয়ে আসলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব এবং অবাস্তব ব্যাপার। আর এই কারণেই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। 

তা ছাড়া সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। বাজারে কোন পণ্যেরই সঙ্কট নেই, কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। তবুও জিনিসপত্রের দাম কেন বাড়ছে? এটির ব্যাপারে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার এবং এই প্রশ্নের রাজনৈতিক উত্তর খোঁজা দরকার। কারা সিন্ডিকেট করছে, তাদেরকে খুঁজে বের করা দরকার এবং সিন্ডিকেটের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থার নিশ্চিত করে পণ্যের দাম সহনীয় করা দরকার। কিন্তু কোনকিছু না করে বিজ্ঞানভিত্তিক কোন পরিকল্পনা ছাড়াই হুটহাট করে কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলে বাজারে সুফল আসবে না। বরং জনআস্থার সঙ্কট তৈরি হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপিকে দায়ী করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলেন কিনা সেটি ভেবে দেখার বিষয়। কারণ বিএনপি যদি বাজারে কারসাজি করে তাহলে তথ্য উপাত্ত দিয়ে নিহ্নিত করতে হবে যে, কারা কারসাজি করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক চটিল বক্তব্য দিয়ে জনগণকে দ্রব্যমূল্যের এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্ত করা যাবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭