ইনসাইড থট

স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা


প্রকাশ: 24/03/2024


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকের মূল প্রবন্ধের চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত এবং আরাধ্য শব্দ। ব্যক্তিজীবনে যেমন প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে, স্বাধীনতার জন্য তৃষ্ণার্ত থাকে এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করে তেমনই একটি রাষ্ট্রের জন্য তার চূড়ান্ত পরিণতি এবং তার বিকাশের পথ যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতার মাধ্যমে। ব্যক্তির স্বাধীনতা যেমন তাকে বিকশিত করে, মুক্ত করে, তার স্বাধীন চিন্তার ধারাকে স্ফুরিত করে ঠিক তেমনিভাবে একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সেই রাষ্ট্রের সমস্ত জনগোষ্ঠীকে একটি উন্নত এবং আধুনিক পথে নিয়ে যায় এবং আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুফল যেন সব নাগরিক ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করে। এ কারণে আমরা যদি পৃথিবীর ইতিহাস বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব যে, স্বাধীন না হওয়া ছাড়া কোন জাতি আত্মসম্মান নিয়ে, আত্মমর্যাদা নিয়ে এবং উন্নত হয়ে বেঁচে থাকতে পারেননি। আর তাই পৃথিবীতে, দেশে দেশে সবসময় স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আমরা দেখেছি, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতার জন্য সমঝোতা হয়েছে এবং স্বাধীনতার জন্য সারা বিশ্বের মানুষ সবসময় তাড়িত হয়েছে।

নেলসন ম্যান্ডেলা তাই বলেছিলেন যে, স্বাধীনতা ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। স্বাধীনতা ছাড়া একটি রাষ্ট্র মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্রের কথা যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে দেখব যে, ১৯৪৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালি জাতিকে তখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব, বাঙালি জাতিকে তখনই একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখানো সম্ভব যখন এই রাষ্ট্রটি স্বাধীন হবে। আর এ কারণেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের প্রথম দিন থেকেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা লালন করেছিলেন এবং সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রামের এক পদযাত্রার সূচনা করেছিলেন। যার পরিণতি ১৯৭১ সালে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যে, স্বাধীনতা যদি আমরা অর্জন করতে না পারি তাহলে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। আর তাই স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কেমন হবে, বাংলাদেশকে কোন পথে তিনি দেখতে চান, বাংলাদেশ কীভাবে একটি আধুনিক, প্রগতিশীল উন্নত রাষ্ট্র হবে তার একটি রুপ পরিকল্পনা তিনি এঁকেছিলেন। এই রূপ পরিকল্পনা কিন্তু ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পরে তিনি আকেননি। আসেননি। ১৯৪৭ সালে তিনি ধারাবাহিকভাবে যখন তিনি স্বাধীনতার আন্দোলন করছেন, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ কেমন হবে তারও একটি পরিকল্পনা তিনি এঁকেছিলেন। এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য তিনি মাত্র পেয়েছিলেন সাড়ে তিন বছর সময়। 

আমরা সবাই জানি যে, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যে দেশটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডব চালিয়েছে নয় মাস, সেই দেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরে সবকিছু ঠিকঠাক করে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের একটি কাঠামো পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। আমরা যেটাকে বলি একটি আর্কিটেকচারাল প্ল্যান। এই কাঠামো পরিকল্পনাটি ছিল সোনার বাংলার স্বপ্ন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি স্বাধীনতার পরও ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পরও তারা পরাজয় মেনে নেননি। তারা বাংলাদেশে প্রতি বিপ্লব শুরু করেছিল এবং সেই প্রতিবিপ্লবের ধারায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। এই হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুফল গুলোকে ব্যর্থ করে দেওয়া। বাংলাদেশকে আবার পরাধীন রাষ্ট্র বানানো, পাকিস্তানের কনফেডারেশন বানানো। সে জন্যই আমরা পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় কেন্দ্র ছিল, তাদের চরিত্রগুলো যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব যে, খুনি মোশতাক, জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পর্যন্ত প্রত্যেকেই পাকিস্তানি ধারার এবং পাকিস্তানপন্থী অথবা পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। যে কারণে তারা বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার সুফল যেন সব মানুষ না পায় সেজন্যই তারা রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিচালিত করতেন। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল বাংলাদেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এই প্রচেষ্টাকে রুখে দেওয়ার জন্যই ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে আসেন তখন তিনি একটি প্রতিকূল বন্ধুর পরিবেশে এসেছিলেন এবং তিনি যে একটি কাজ নিবির ভাবে বিশ্বস্ততার সাথে করেছে তা হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলোকে লালন করা, ধারন করা এবং সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য জীবন জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করা। আজকে যে আমরা বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং চিন্তা মননের বিকাশ দেখছি তার মূল কারণ হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন। 

এখন আমরা যদি স্বাধীনতার সুফল প্রসঙ্গে আসি। এর সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণার কি সম্পর্ক। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর কথা যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, সেই দেশগুলো বেশি উন্নত হয়েছে যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রথমে নিয়ে এসেছে। আর এরকম উদাহরণ আমাদের চারপাশে অনেক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত চিকিৎসাবিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে এটি বুঝেছিলেন। আর বুঝার কারণেই তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলোকে নির্ধারণ করেছিলেন তার মধ্যে তিনি শিক্ষা, চিকিৎসাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা যদি লক্ষ্য করি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেখানে দেখব যে, বঙ্গবন্ধু চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাংরাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণের ক্ষেত্রে যে অগ্রাধিকারগুলো নিরূপণ করেছিলেন তার মধ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে তিনি অগ্রাধিকারে এনেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন যে, প্রান্তিক জনপদ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তিনি বিএমআরসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এই সময়টিকে আমরা বলি অন্ধকার যুগ। এই সময় বাংলাদেশ একটি অন্ধকার জগতে আবিষ্ট হয়েছিল। যে কারণে আমাদের আধুনিক চিন্তা, মুক্ত চিন্তা, প্রগতির চিন্তা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা গবেষণাও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সেখান থেকে আজ আমরা একটা যাত্রাপথ শুরু করেছি।

আমরা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে দেখেছি যে, তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণার জন্য আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা যেন সঠিক নেতৃত্বে পরিচালিত হয় সেজন্য তিনি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর মতো একজন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে বিএমআরসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আশা করি আজকে বিএমআরসি যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছে সেই উদ্যোগগুলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সাথে পরিপূরক। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার চিন্তার সাথে একই বারে সম্পৃক্ত। কাজেই আমরা তিনটি স্তর সুস্পষ্টভাবে দেখি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা এবং বিএমআরসির বাস্তবায়ন পরিকল্পনা। এই তিনটি যদি এক বিন্দুতে চলতে পারে তাহলে নিশ্চিয় বাংলাদেশ একটি আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের সামনে দাঁড়াবে। শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, চিন্তা মনন এবং গবেষণায় একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বকে আলোকিত করবে। 










প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭