ইনসাইড বাংলাদেশ

কমেছে গড় আয়ু, বেড়েছে শিশুমৃত্যু


প্রকাশ: 25/03/2024


Thumbnail

দেশে বেড়েছে শিশুমৃত্যুর হার। নবজাতক, এক বছরের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এই  তিন ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বাড়তি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিগত পাঁচ বছরের হিসাবে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪।

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানে বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে (২০২৩) এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।

বিবিএস বলছে, ২০২২ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১। বিবিএস প্রতিবছরই ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ প্রকাশ করে থাকে।

বিবিএসের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্ম, মৃত্যু, আয়ুষ্কাল, বিয়ের মতো নানা বিষয়ের চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজারে।

বিবিএসের হিসাবে, দেশে পুরুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। এর মানে, গড় হিসাবে এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। প্রত্যাশিত গড় আয়ু মানে হলো, ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা গড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর আয়ু পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়।

শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪।

বিবিএস বলছে, ২০২২ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১।

অন্যদিকে এক মাসের কম বয়সী নবজাতকের মৃত্যুহার হঠাৎ বেড়ে গেছে। প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ২০ জন মারা যায়। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬। পাঁচ বছর আগে ছিল ১৫। এ ছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ জন। ২০২২ সালে ছিল ৩১ জন। পাঁচ বছর আগে ছিল আরও কম, ২৮ জন।

প্রতিবেদনটি প্রকাশকারী বিবিএসের এসভিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন অনুষ্ঠানে গড় আয়ু কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, মৃত্যুহার, বিশেষ করে শিশুমৃত্যু বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। ৪০ বছর পার হলেই অনেকে এমন রোগে আক্রান্ত হন। এসব কারণে গড় আয়ু কমতে পারে।

অবশ্য আলমগীর হোসেন মনে করেন, পরিসংখ্যানগতভাবে গড় আয়ুর হিসাবটি অপরিবর্তিত আছে। সংখ্যাগত কিছুটা পার্থক্য আছে মাত্র।

বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে শিশুমৃত্যু বেড়েছে। শিশুমৃত্যু বেড়ে যাওয়ার অর্থ দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন সেবা ও প্রসবোত্তর সেবা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না।

গড় আয়ু যেকোনো দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসূচক। স্বাধীনতার বছর বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর। এর পর থেকে সেটা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। গত বছরের এপ্রিলে বিবিএস প্রথম বলেছিল, দেশে গড় আয়ু কমেছে। এ বছরও দেখা গেল গড় আয়ু কমেছে।

রোববার (২৪ মার্চ) বিবিএসের এই  অনুষ্ঠানে গড় আয়ু কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু শিশুমৃত্যু কেন বেড়েছে, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। শিশু মৃত্যুহারও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসূচক। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যু কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কিন্তু বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে শিশুমৃত্যু বেড়েছে। শিশুমৃত্যু বেড়ে যাওয়ার অর্থ দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন সেবা ও প্রসবোত্তর সেবা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আটবার প্রসব–পূর্ব সেবা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৬০ শতাংশ গর্ভবতী চারবারও প্রসব–পূর্ব সেবা পান না। দেশে এখনো ৩৩ শতাংশ প্রসব হয় বাড়িতে।

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সমস্যার দুটো দিক। প্রথমত, শিশুস্বাস্থ্য ও মাতৃস্বাস্থ্য—এভাবে খণ্ড খণ্ডভাবে স্বাস্থ্যসেবাকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। সমগ্রিক ও সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলার ব্যবস্থা না হলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতেই থাকবে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষকে সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে আরও সচেতন আচরণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী আরও সহজলভ্য করতে হবে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণ দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ‘হার্ট অ্যাটাকে’।

বিবিএসের প্রতিবেদনে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণ দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ‘হার্ট অ্যাটাকে’। অন্য কারণগুলো হলো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ; শ্বাসতন্ত্রের রোগ; যকৃতের ক্যানসার, অ্যাজমা; সাধারণ জ্বর; উচ্চ রক্তচাপ; নিউমোনিয়া,; হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিস।

তবে, একটি ইতিবাচক দিক হলো, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। বিবিএসের ২০২৩ সালের হিসাব অনুসারে, প্রতি ১ লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১৩৬ জন মা মারা যান। আগেরবার এই সংখ্যা ছিল ১৫৩। ২০২১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৬৮।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭