প্রকাশ: 25/03/2024
রাজশাহীর বেকার যুবক যুবতিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে উন্নত জাতের বেইজিং বা পেকিন হাঁস। এ হাঁস পালন করে ইতোমধ্যে অনেক যুবক-যুবতি স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই সাথে দেশী হাঁসের চাহিদাও মেটাচ্ছে এই বেইজিং বা পেকিন হাঁস। দেশি হাঁসের চেয়ে এ হাঁস পালনে খরচ কম, অল্প দিনে মাংস ও ডিম হওয়ায় পেকিন হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন রাজশাহীর বেকার নারী-পুরুষরা।
সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা উৎপাদন, স্বল্প জায়গায় খামার করে এ হাঁস পালন করে অল্প দিনেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেকার নারী-পুরুষ স্বল্প পুঁজিতে এ হাঁস
পালন করে বেকারত্ব দূর করতে সক্ষম হবে। তাছাড়াও এর মাধ্যমে মাংস ও আমিষের চাহিদাও পূরণ
হবে।
রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, তানোর ও বাগমারা উপজেলায় এ হাঁস বাণিজ্যিকভাবে পালন শুরু হয়েছে। এ চারটি উপজেলায় প্রায় শতাধিক খামারে পালন হচ্ছে পেকিন হাঁস। মূলত এই হাঁস পালনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে রাজশাহীর মোহনপুরের জাহানাবাদ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শতফুল এনজিও। সমন্বিত কৃষি ইউনিট (প্রাণী সম্পদ খাত) পল্লী কর্ম
সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এনজিও শতফুল এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
বর্তমানে রাজশাহীতে দেশী হাঁসের মাংস ও ডিমের চাহিদা অনেক। এই দেশি হাঁসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট ও হোটেল। দেশি হাঁসের চাহিদা বেশি থাকায় এর দামও বেশ চড়া। এরই প্রেক্ষিতে উন্নত
জাতের বেইজিং বা পেকিন হাঁস রাজশাহীতে দেশী হাঁসের চাহিদা পূরণ করছে।
পেকিন হাঁসের খামার ঘুরে দেখা গেছে, এ হাঁস দেখতে অনেকটাই দেশী হাঁসের মত। আকার বা গায়ের রং দেশি হাঁসের মতই সাদা। প্রথমে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি বিদেশী হাঁস। পেকিন হাঁস দুই ধরনের। একটি ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়, অন্যটি মাংসের জন্য। এ হাঁস মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। উৎপাদন খরচও কম। একটি হাঁস ৫০ দিন পালন করে বিক্রির উপযোগী করতে খরচ হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪’শ টাকা। আর এ হাঁস বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০টাকায়।
দেখে গেছে, উন্নত জাতের এ পেকিন হাঁস পালনে খুব বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। খাবারও দেশি হাঁসের চেয়েও অনেক কম লাগে। এ হাঁস ৯০ দিনের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে। দুই বছর পর্যন্ত এ হাঁস ডিম দিয়ে থাকে। এ হাঁস মোটাতাজা করণের জন্য ব্রয়লার গোয়া ও ডিমের জন্য লেয়ার ফিড খাওয়ানো হয়।
মোহনপুর উপজেলার পেকিন হাঁস পালনকারী নাসরিন আক্তার বলেন, ‘একটা সময় আমার সংসার চলতো না। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হতো। কিন্তু শতফুল এনজিওর মাঠ কর্মীর পরামর্শে ও তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি পেকিন হাঁস পালন শুরু করি।
গত দুই বছর ধরে পেকিন হাঁস পালন ও বাচ্চা উৎপাদন করে আমার সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।’
মোহনপুরের তশোপাড়া গ্রামের বিপুল হাসান বলেন, ‘একটা সময় কাজ না থাকায় সংসার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। প্রতিবেশীদের স্বল্প পরিসরে পেকিন হাঁস পালন দেখে আমি এনজিও শতফুলে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে প্রশিক্ষণ দেন। আমি মাত্র ১ শ’টি হাঁস দিয়ে শুরু করি। ছোট খামার থেকে এখন আমার একটি বড় খামারে রূপ নিয়েছে। শুধু মাংসের জন্য নয়, আমি ডিমের জন্য হাঁসে পালন করছি। এ হাঁস পালন করে আমার সংসারে আর কোনো অভাব নেই।’
যুবক হামিউল ইসলাম, বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় একশ হাঁস নিয়ে খামার শুরু
করে বর্তমানে তার খামারে ২৫০ টিরও বেশি হাঁস আছে।
শতফুল এনজিও’র সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ‘আমরা গ্রামে গ্রামে বেকার নারী-পুরুষদের এই হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। প্রশিক্ষণ দেই। বাইরে থেকে এ হাঁসের বাচ্চা আমদানি করতে হয় না। খামারে উৎপাদন হয় এ পেকিন হাঁসের বাচ্চা। সেখান থেকে নতুন খামারীরা বাচ্চা নিয়ে যান। এ হাঁসের রোগ বালাইও অনেক কম। আমাদের পাশাপাশি রাজশাহী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর খামারীদের দেখভাল করেন।’
শতফুল এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ে অনেক শিক্ষিত নারী-পুরুষ বেকার রয়েছে। আমরা এ পেকিন হাঁস পালনের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, বেকার যুবক-যুবতিরা এ উন্নত জাতের পেকিন হাঁস পালন শুরু করার পর তারা আর চাকরির পেছনে ছুটছে না। প্রতিনিয়ত তারা খামারের পরিধি বাড়াচ্ছেন।
রাজশাহী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার বলেন, ‘রাজশাহীতে ৯৪২ টি হাঁসের খামার রয়েছে। এর মধ্যে এখন নতুন করে আরও পেকিন হাঁসের খামার তৈরি হচ্ছে। আমরা নতুন এসব উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য মনিটরিং করছি। ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সব কিছুই আমরা দেখছি। যারা নতুন এ হাঁসের খামার করছে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, দেশী হাঁসের বিকল্প হচ্ছে বেইজিং বা পেকিন হাঁস। এই হাঁস পালনে একজন যুবক অল্প দিনেই স্বাবলম্বী হতে পারে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭