ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সোমালি জলদস্যু যেন এক আতঙ্কের নাম! কিভাবে তারা এতো শক্তিশালী?


প্রকাশ: 25/03/2024


Thumbnail

সম্প্রতি ভারত মহাসাগরে 'এমভি আবদুল্লাহ' নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ায় বিশ্বজুড়ে সোমালিয়া এখন আলোচনার শীর্ষে। কারণ, ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারত মহাসাগরের পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে গত কয়েক মাসে পণ্যবাহী জাহাজে জলদস্যুদের আক্রমণের ঘটনা দ্রুত বেড়েছে। এসব ঘটনা বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিক, জাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানি এবং সরকারগুলোর মাথাব্যাথার বড় কারণ হয়ে উঠেছে।

লোহিত সাগর ও আরব সাগর ঘেঁষে অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম দস্যুরাষ্ট্র সোমালিয়া। দেশটির নাম শোনামাত্রই ভেসে আসবে সমুদ্রগামী জাহাজ লুটপাট, নাবিকদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের মতো দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ডের চিত্রপট। বিশ্বজুড়ে জলদস্যুতার জন্য কুখ্যাত সোমালিয়ার জনগণ কিছুকাল পূর্বেও শস্য উৎপাদন ও সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কালের পরিক্রমায় তারাই পরিণত হয়েছে ভয়ংকর দুর্ধর্ষ জাতি হিসেবে।

সোমালি জলদস্যুদের কবলে পরে জাহাজ ছিনতাইয়ের খবর হরহামেশাই পাওয়া যায়। মাত্র ১০ থেকে ২০ জলদস্যু মিলেই ছিনতাই করে নিয়ে যায় বিশাল বিশাল সব পণ্যবাহী জাহাজ। 

সাধারণত সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার মূল পথ হলো মুক্তিপণ। বিশ্বজুড়ে জলদস্যুতার জন্য কুখ্যাত সোমালিয়ার জনগণ। যেন সোমালি জলদস্যু এক আতঙ্কের নাম! স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অতিসাধারণ জেলে পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষগুলো এতো শক্তিশালী জলদস্যুতে পরিণত হল কিভাবে?  

ইতিহাস বলছে, প্রাচীনকালে সোমালিয়া ছিল একটি জরুরি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মধ্যযুগে এটি অনেক সোমালি সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক নেতৃত্ব পেয়েছিল। ষাটের দশকে 'আধুনিক সোমালিয়া' স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি এবং গণতন্ত্রের দলিল ছিল। তবে, ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আলী শারমার হত্যা হয় এবং এরপরই সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে সোমালিয়া গণতান্ত্রিক যুগের কান্না দেখে। সামরিক স্বৈরাচারী শাসনের সময়ে গৃহযুদ্ধ চলে। এসময় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয় এবং অনেকে শরণার্থী হয়ে চলে যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। মূলত তারপর থেকেই সোমালিয়ায় জলদস্যু উত্থানের শুরু হয়।

সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে জলদস্যুরা আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর জন্য হুমকি হয়েছে। মূলত অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে তাদের স্থানীয় পরিবেশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। 

ডিআইডব্লিউ এবং মার্কিন হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির মতে, বিদেশি জাহাজ থেকে সোমালি উপকূলে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের বসবাসের পরিবেশ হুমকিতে পড়েছিল। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলারা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজের অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বিকল্প উদ্যোগ হিসেবে তারা বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই করে। 

২০০৯ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, সোমালিয়ায় প্রায় ৭০ শতাংশের উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে। এমনকি, সোমালিয়ার অনেক সরকারি কর্মকর্তা জলদস্যুদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে।  

তাছাড়া সোমালিয়ান জলদস্যুদের আলাদা অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- একে৪৭, একেএম, টাইপ৫৬, টিটি৩৩, পিকে, আরপিজি৭ ইত্যাদি। এছাড়াও, আরজিবি৫ ও এফ১ এর মতো শক্তিশালী হাতবোমারও ব্যবহার করে থাকে জলদস্যুরা। 

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিয়ায় জলদস্যুতা এখন বিশাল বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য দেশে থাকা সোমালিরা এই ব্যবসায় বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগও করে থাকে। সোমালিয়ায় দস্যুদের পাশাপাশি সোচ্চার রয়েছে গ্যাং বাহিনী। দেশটির উত্তরাঞ্চলের গ্যালমাদাগ প্রশাসন দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে জলদস্যুদের ব্যবহার করে থাকে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, সোমালিয়ার সেনাবাহিনী, সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এমনকি অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী এই লুটের টাকার ভাগ পেয়ে থাকে। 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জলস্যুদের মুক্তিপণের অর্থায়নেই দেশটিতে উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। যার ফলে গড়ে উঠছে বিলাসবহুল হোটেল। দেশটির অন্যান্য অংশ থেকেও বিনিয়োগকারীরা সেখানে অর্থ খাটাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, জলদস্যুতা এখন সোমালিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।  

বিশাল মুনাফার কারণে সোমালিয়ার অনেক যুদ্ধবাজ গোত্র নেতারাই সুসংগঠিত উপায়ে 'জলদস্যু ব্যবসা' শুরু করেছে। দলে দলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তরুণরা জলদস্যুদের দলে নাম লেখাচ্ছে। তবে, এর সাথে জড়িত রাঘববোয়ালরা এখনও পর্যন্ত পর্দার অন্তরালেই রয়েছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭