ইনসাইড পলিটিক্স

ইন্ডিয়া আউট নিয়ে বিএনপিতে দ্বিধা বিভক্তি এবং স্ববিরোধিতা


প্রকাশ: 25/03/2024


Thumbnail

বিএনপি এখন মালদ্বীপের কায়দায় ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে নাটক তৈরি করেছে তার মধ্যে স্ববিরোধিতা এবং দ্বিধা বিভক্তি ক্রমশ প্রকাশ্য রূপে দেখা দিচ্ছে। গতকালও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আজকের রাজনীতিতে সবচেয়ে সমাদৃত শব্দ ভারতীয় পণ্য বর্জন। এ পণ্য বর্জন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন অপমান, বঞ্চনা, লঞ্ছনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রিজভীর এই বক্তব্য বিএনপির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয় বলে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন যে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের কোন দলগত সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করিনি। বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন যে, এটি রিজভীর অবস্থান, বিএনপির অবস্থান নয়। আজ রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলেও বিএনপির একজন সদস্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এরকম হঠকারী কর্মসূচি কখনোই বিএনপি গ্রহণ করবে না বা বিএনপি গ্রহণ করতে চায় না। তিনি এটিও বলেছেন যে, এই কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে এক ধরনের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির এই ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচির তীব্র বিরোধিতা করছেন। কারণ তিনি মনে করেন যে, এই ধরনের কর্মসূচি বিএনপিকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করবে। বিএনপির এই ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি বা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতাও দেখা যাচ্ছে। যখন বিএনপি ভারত বিরোধীতা করছে, ভারতীয় পণ্য বর্জন করছে ঠিক সেই সময় তাদের ইফতার পার্টিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডাকার জন্য মরিয়া চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান একাধিকবার ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং অনুরোধ করেছিলেন যেন ভারতের রাষ্ট্রদূত ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রণয় ভার্মা ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকেনি। তাছাড়া বিএনপি ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে বক্তব্য দিচ্ছে বা আয়োজন করছে তার সঙ্গে বিএনপি অন্যান্য নেতাদেরকে সায় দিতেও দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র রুহুল কবীর রিজভী ছাড়া আর অন্য কোন নেতাই ভারতীয় পণ্য বর্জন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। তার ফলে ভারত বিরোধীতা বা ভারতীয় বর্জন নিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা দেখা গিয়েছে। 

বিএনপির বিভিন্ন সূত্র গুলো মনে করেন, তাদের ভারতীয় পণ্য বর্জন এক ধরনের পলিটিক্যাল স্ট্যান্ট। এর মাধ্যমে তারা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে চায়। ভারতকে তারা দেখাতে চায় যে, আমরা বাংলাদেশের শক্তি এবং আমরা যদি ভারত বিরোধিতা করি তাহলে ভারতের জন্য এটি হবে অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং বাংলাদেশে ভারতের অবস্থান বিপন্ন হতে পারে। আর এ কারণেই ভারত যেন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে, এরকম একটি কৌশল চাপ সৃষ্টি হিসেবেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের নাটক করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন এটা হঠকারিতা এবং এর ফলে বিএনপি আরও কোণঠাসা হবে, ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর এই দ্বিধা বিভক্তি শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে কোথায় নিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭