ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতীয় পণ্য বর্জন: বাস্তবতা এবং চমক


প্রকাশ: 25/03/2024


Thumbnail

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একটি চাদর আগুনে পুড়িয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে সামিল হয়েছেন। তিনি এটিও বলেছেন যে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিটি এক দিনে আসেনি। বরং দীর্ঘদিনের অপমান, বঞ্চনা এবং লাঞ্ছনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তিনি এটিও বলেছেন, আজকে রাজনীতিতে সবচেয়ে সমাদৃত শব্দ ভারতীয় পণ্য বর্জন। কিন্তু ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই ঘোষণা কতটা রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি আর কতটা বাস্তব এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন মানুষ বা বাংরাদেশের মতো একটি রাষ্ট্র ভারতীয় পণ্য কি বর্জন করতে পারে?

আমরা যদি আমাদের প্রতিদিনের জীবন আচার পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব যে, সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত প্রতিদিনই ভারতীয় নানা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন তারা কি ভারতীয় পেঁয়াজ ব্যবহার করবেন না? তারা কি সকালে টুথপেস্ট হিসেবে ভারতীয় টুথপেস্ট ব্যবহার করছেন না? তারা কি তাদের খাবারের মসলার জন্য জিরা, গরম মসলার মতো ভারতীয় মসলাগুলো ব্যবহার করছেন না? যে মসলাগুলো সিংহভাগই আসছে ভারত থেকে। তারা কি বাসমতি চাল ব্যবহার করছেন না? তাদের গৃহকর্মীদের জন্য তারা কি ভারতীয় শাড়ি দিচ্ছেন না? ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখা থেকে কি তারা বিরত থাকতে পারবেন? তারা কি ভারতীয় সংবাদ থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন বা ভারতীয় সিনেমা দেখবেন না এমন শপথ করতে চান?

ভারতীয় পণ্য বর্জন মানে একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা। বাংলাদেশের কোন মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন না? যে দেশে সুন্নতে খাতনা করাতে শিশুর মৃত্যু হয় সেদেশের এই চিকিৎসা নিয়ে ধুকে ধুকে মরবে? যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা এই বাস্তবতাগুলো ভেবে দেখেছেন? তারা কি নিজেরা এ সমস্ত পণ্য বর্জন করতে পারবেন বা করেছেন? এ সমস্ত পণ্য নিজেরা বর্জন না করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজির করার জন্যই ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ডাক দেওয়া হয়েছে সে ডাক কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি বিএনপির রাজনীতিতে আরেকটি বিভ্রান্তকর সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

এখন বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্ব একটি পরিবারে বসবাস করে। বিশ্বায়নের এই যুগে কোন দেশ যেমন কোন দেশকে ছাড়া চলতে পারে না তেমনি একটি দেশের নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। যেমন কোলগেট টুথপেস্ট এর কথাই যদি ধরা যায়, সেটি ভারতে পণ্য। তবে এটি একটি বহুজাতিক কোম্পানি। আবার বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জন করে তাহলে কতগুলো ক্ষেত্রে চরম সংকট এবং দুর্দশা তৈরি হবে। পেঁয়াজের কথাই ধরা যাক কিংবা চিনির কথাই ধরা যাক। ভারতের পেঁয়াজ, ভারতের চিনি না আসলে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তা কল্পনা করা যায় না। কাজেই যারা ভারত বিরোধিতার জিকির তুলছেন তারা কি বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ? তারা কি জেনে বুঝে এটা করছেন নাকি স্রেফ রাজনৈতিক একটি চমক সৃষ্টি করার জন্য জনগণকে আবার জিম্মি করার এক মতলব নিয়েছেন। জনগণের জীবন দুর্বিষহ করার জন্য এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বাজারে অরাজকতা সৃষ্টির জন্যই কি এ ধরনের অবাস্তব কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭