আগামীকাল মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে বর্বরোচিত হামলা এবং অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাঙালি নিধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, সেই কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তিনি তার পরপরই কারাবরণ করেন। কিন্তু জাতির পিতার এই স্বাধীনতার ঘোষণায় বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছিল এবং বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
জাতির পিতার স্বাধীনতার এই ঘোষণার ফলে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের দিশা পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে ৩০ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতা সেই স্বাধীনতার সুফল আমরা সহজে পাইনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এবং শুরু হয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের রাজত্ব। বাংলাদেশের এই ৫৩ বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে এবং ক্ষমতাকেন্দ্রে থেকে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় যে সমস্ত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন;
খুনি খন্দকার মোশতাক: খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রথম থেকে পাকিস্তানের চর ছিলেন। খুনি মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কনফেডারেশন বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদের বিচক্ষণতার জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। তবে সবসময় পাকিস্তানিদের পক্ষেই কাজ করেছেন এই খুনি।
জিয়াউর রহমান: জিয়াউর রহমান ছিলেন আরেকজন পাকিস্তানি চর, পাকিস্তানি এজেন্ট। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু বাস্তবের ইতিহাসগুলো সে সময় জিয়াউর রহমান গিয়েছিলেন বাঙালি সৈন্যদেরকে নীরস্ত্র করার জন্য। তিনি পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। বিভিন্ন দলিলপত্র থেকে এখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে জিয়া ছিলেন পাকিস্তানিদের একজন চর। আর স্বাধীনতাবিরোধী এই ব্যক্তিটিও রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান সবসময় বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে ক্ষমতাকেন্দ্রে আনার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
শাহ আজিজুর রহমান: শাহ আজিজুর রহমান মুসলিম লীগের নেতা রাজাকার এবং পাকিস্তান পাকিস্তানপন্থী দালাল ছিলেন, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী। এ জন্য তিনি জেলও খেটেছিলেন। জিয়াউর রহমান তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে ক্ষমতায় আনার যে মিশন, সেই মিশনে জিয়াউর রহমান শাহ আজিজকে ক্ষমতায় বসান।
মশিউর রহমান যাদু মিয়া: মশিউর রহমান যাদু মিয়া ছিলেন আরেক রাজাকার। যাকে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার হিস্যা দিয়েছিলেন। মশিউর রহমান যাদু মিয়া একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন।
মতিউর রহমান নিজামী: মতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধী এবং ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাকে বিএনপি, জামায়াত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতার হিস্যা দিয়েছিলেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হয় এবং তার দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি পাপমুক্ত হয়।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ: আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ হলেন আরেক যুদ্ধাপরাধী। যাকে বিএনপি-জামায়াত মন্ত্রী করেছিল এবং ক্ষমতাকেন্দ্রে জায়গা দিয়েছিল। নরঘাতক এই পিশাচেরও সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে বিশেষ ট্রাইবুনালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী: আরেকজন যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও ক্ষমতাকেন্দ্রে এনেছিল বিএনপি। এই সাকা চৌধুরীরও বিচার হয়েছে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশের পবিত্র মাটিকে কলঙ্কিত করেছে এই যুদ্ধাপরাধীরা স্বাধীনতা বিরোধীরা। যাদেরকে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।