ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারত 'সেলা টানেল' বানিয়ে চীনকে কিসের বার্তা দিতে চাচ্ছে?


প্রকাশ: 26/03/2024


Thumbnail

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল প্রদেশের পার্বত্য এলাকায় টানেল নির্মাণ করেছে মোদি সরকার।  টানেলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই টানেলের সীমান্ত ঘিরে ভারত ও চীনের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। 

চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'সেলা টানেল' উদ্বোধন করেন। বিশ্বে এত উচ্চতায় দুই লেনের এটিই প্রথম টানেল। 

এই টানেল নির্মাণের ফলে চীন-অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তের অগ্রবর্তী এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে সামরিক সরঞ্জাম অতি দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে। চীন সীমান্তবর্তী তাওয়াংয়ের সঙ্গেও সব মৌসুমে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে। 

কিন্তু এই টানেলটি বেইজিংয়ের নজরে এসেছে। কয়েক বছর ধরে ২ হাজার ১০০ মাইল দীর্ঘ সীমান্তে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে নানা বিতর্ক ও উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। এমনকি দুই পক্ষের মধ্যে নানা রকমের সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে। 

২০২০ সালে আকসাই চীন-লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। তখন ভারতের ২০ ও চীনের ৪ সেনা নিহত হয়েছিলেন। এমনকি, কয়েক দশকের বিতর্কের ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও বেঁধেছিল।

চীন দাবি করছে, যেখানে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে, সেই অরুণাচল প্রদেশ তাদের। যদিও বর্তমানে এই অঞ্চল ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা অরুণাচল প্রদেশে ভারতের টানেল নির্মাণ প্রকল্প এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ তুলেছেন, দিল্লি সীমান্তের শান্ত পরিস্থিতিকে ছোট করে দেখছে। 

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র অরুণাচল প্রদেশের নাম চীনা ভাষায়  'জাঙ্গনান' বা দক্ষিণ তিব্বত উল্লেখ করে বলেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে, এমন যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে আমরা ভারতীয় পক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। চীনের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে এবং প্রয়োজনে তারা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সুদৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে। 

ভারতও কড়া জবাব দিয়েছে, চীনের দাবিকে তারা 'অবাস্তব' বলে উল্লেখ করে বলেছে, ওই অঞ্চল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সব সময়-ই তা ভারতের থাকবে। 

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বিতর্ক এশিয়ার বৃহত্তম দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে, এই বিতর্ক এমন একসময়ে শুরু হয়েছে, যখন ভারতে জাতীয় নির্বাচনের ঢামাঢোল বাজতে শুরু করেছে। মোদির হিন্দুত্ববাদী দলের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। 

মোদির ভারতে জাতীয়তাবাদের প্রবল উত্থানের পাশাপাশি চীনেও অনুরূপ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কঠোর পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছেন। অবশ্য দুই পক্ষই ২০২০ সালের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছে। 

ভারত-ভুটান অংশীদারত্বকে আরও সুসংহত করতে গত শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি থিম্পু সফরে গেছেন। দুর্গম হিমালয় অঞ্চলের এসব দেশের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত নিয়েও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে। এখানে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে ভারত সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে অরুণাচল প্রদেশ সফরকালে নরেন্দ্র মোদি 'সেলা টানেল' নির্মাণকাজের প্রশংসা করে এটিকে 'প্রকৌশলের বিষ্ময়' বলে উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণসহ আরও বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা বলেন।

যেসব সীমান্তে ঝামেলা রয়েছে, সেখানে নিজেদের ভূখণ্ডে ভারত সরকার উন্নয়ন কাজ জোরদার করেছে। ভারত সরকারের ধারণা, উন্নয়নকাজ না হলে সেসব দুর্গম অঞ্চলে চীনের আক্রমণ, অনুপ্রবেশ বা দখলের আশঙ্কা তৈরি হবে। বেইজিং বলছে, তারা ভারতের তৎপরতা ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি করছে।

চীনের সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) গত বছর সড়ক, সেতু ও বিমানঘাঁটি মিলিয়ে ১১৮টি প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেছে। এসব প্রকল্পের অর্ধেকই অরুণাচল প্রদেশ ও লাদাখে।

বেইজিং অভিযোগ করছে, সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে ভারত দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতিকে জটিল ও বিপর্যয়কর করে তুলছে।

তবে ভারতের পক্ষে দাবি করা হচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ করে চীন সেখানে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে নয়াদিল্লির চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে। ওই সব এলাকায় চীন অসংখ্য গ্রাম তৈরি করে সেখানে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। তবে বেইজিং অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, ভারত যেমনটা দাবি করছে, সীমান্তে তারা অন্য কারও এলাকা দখল বা শক্তি প্রয়োগ করেনি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭