ইনসাইড বাংলাদেশ

‘রাজাকারের তালিকা করতে ‘সাহস পাচ্ছে না’ জামুকা’


প্রকাশ: 27/03/2024


Thumbnail

দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও রাজাকারের তালিকা তৈরির করতে পারেনি , জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা)। তালিকা করার ‘সাহস পাচ্ছে না’ সংস্থাটি। তাকিয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিকে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কয়েক দফায় জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসেই রাজাকারদের তালিকা ঘোষণা করবেন। তবে সেটা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকেরা মনে করেন, রাজাকারের তালিকা তৈরিতে কমিটি করা উচিত।

২০২২ সালের আগস্টে জামুকা আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। তাতে রাজাকারের তালিকা তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয় জামুকাকে। সম্প্রতি জামুকার কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা । তাঁদের দাবি, রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে গেলে শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম অথবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের নাম চলে এসেছে। এমন ব্যক্তিদের নাম আসছে, যাঁরা অনেক বড় বড় অবস্থানে আছেন। রাজাকারের আত্মীয়স্বজন যেমন প্রশাসনে আছেন, তেমন ক্ষমতাসীন দলেও আছেন। ফলে তাঁরা এই তালিকা করতে এগোতে সাহস পাচ্ছেন না।

আইন অনুযায়ী পদাধিকারবলে জামুকার চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। জামুকার কর্মকর্তাদের ওই মন্তব্যের সঙ্গে অনেকটা একমত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ধরুন, আমরা এমন কাউকে পেলাম যিনি নামকরা রাজাকার ছিলেন, আবার তিনি আমাদের মতো কারও ভগ্নিপতি, তাই তিনি বাদ। আবার আমি আপনাকে অপছন্দ করি, তাই তালিকায় আপনার নাম ঢুকিয়ে দিতে পারি। এভাবে তো তালিকা করা সম্ভব নয়। সুতরাং বিষয়টা সহজ নয়।’

চলতি বছরের মার্চ মাসেই রাজাকারদের তালিকা ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার ( ২৫ মার্চ) তিনি বলেন, এ বিষয়ে জামুকার সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

রাজাকারের তালিকা তৈরির অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে জামুকার সদস্য শাজাহান খান সোমবার (২৫ মার্চ) বলেন, ‘আমি ১৫০ জনের তালিকা পেয়েছি। মন্ত্রী চাইলে এটা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় এটা পর্যায়ক্রমে দিলে নানা ধরনের সমালোচনা হবে, তাই সারা দেশ থেকে পেলে একবারেই তালিকা প্রকাশ করতে চাই।’

রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধী ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা (প্রথম পর্ব) ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সরকার প্রকাশ করে। তবে তাতে নানা ভুল ও অসংগতি থাকায় শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। সেই তালিকায় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদেরও নাম ছিল। আবার কুখ্যাত অনেক রাজাকারের নাম তালিকায় ছিল না।

পরে নিজেরাই কাজটি করার উদ্যোগ নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ জন্য ২০২০ সালের ৯ আগস্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একটি সংসদীয় উপকমিটি গঠন করে। শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি নিয়মিত বৈঠক করতে পারছিল না। পরে ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আগের উপকমিটি বাতিল করে শাজাহান খানকেই আহ্বায়ক রেখে নতুন উপকমিটি করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণায় যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পর রাজাকারের তালিকা করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। তবে কাজটি করার সক্ষমতা সংসদীয় উপকমিটির কতটা রয়েছে, সে প্রশ্নও রয়েছে। বিশেষ করে এ ধরনের কাজে তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পেশাদার ও দক্ষ জনবল দরকার। যেটি জামুকার নেই। সংসদীয় উপকমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার মতো কাঠামো রয়েছে কি না, থাকলে সেটি যথেষ্ট কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এই অবস্থায় তালিকা তৈরির কাজটি কতটা দক্ষতা ও নির্ভুলতার সঙ্গে করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

অন্যদিকে রাজাকারের তালিকা তৈরির কাজটি করার আইনগত কর্তৃত্ব থাকার পরও তারা কেন সংসদীয় উপকমিটির তালিকার জন্য বসে আছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এই কাজে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংসদীয় উপকমিটিকে কতটা সহায়তা করছে, সেটিও স্পষ্ট নয়।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির একাধিকবারই এ বিষয়ে বলেছেন, আমলানির্ভর বা রাজনীতিবিদনির্ভর কোনো কমিটি এ ধরনের তালিকা করতে পারবে না। এ ধরনের তালিকা তৈরি করতে হলে গবেষকদের নিয়ে কমিটি করা উচিত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭