ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতকে চাপে রাখার কৌশলে বিএনপি


প্রকাশ: 27/03/2024


Thumbnail

মুখে ভারত বন্দনা আর ভিতরে ভিতরে ভারত বিরোধিতাকে উস্কে দেওয়া- বিএনপির এই পুরনো কৌশল আবার নতুন করে চালু করতে যাচ্ছে। ভারতকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপি গতকাল তাদের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং এই আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে, তা হল বিএনপি এখন ভারতকে চাপে রাখতে চায়। 

গত দুটি নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং ভারতের আনুকূল্য প্রার্থনা করা হয়েছিল। ভারতের প্রতি তারা নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছিল এবং তারা ভারতের সমর্থন সহানুভূতি চেয়েছিল। কিন্তু ভারত বিএনপির কয়েকটি বিষয়ে সাচ্চা তাদের অবস্থান জানিয়ে দেন।

প্রথমত, ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সঙ্গে তারা কোন সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এই শর্তটি বিএনপি মানেনি। 

দ্বিতীয়ত, বিএনপিকে বলা হয়েছিল যে, বিএনপিতে যেন তারেক জিয়ার নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হয়। যেহেতু তারেক জিয়া দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং সরাসরি দেশে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, কাজেই তার এখন নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করা উচিত্ নয়। 

তৃতীয়ত, ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, বিএনপিতে যারা জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদেরকে দলে রাখা যাবে না। বিএনপি এই তিনটি বিষয়ের একটিও প্রতিপালন করেনি। যার ফলে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি দূরত্ব তৈরি হয়। অবশ্য ভারতের সঙ্গে বিএনপির অবিশ্বস্ততা এবং দূরত্ব তৈরি হয় বহু আগে থেকেই। ২০০১ সালে ভারতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল সেইবার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জঙ্গিদের করিডর হিসাবে ব্যবহার করতে দেয় বিএনপি এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর সরাসরি স্পষ্ট হয় যে, বিএনপি আসলে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ভারতকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এরপর থেকেই ভারতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু বিএনপি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ভারতের প্রতি আনুগত্য দেখানো এবং ভারত যা দাবি করে সবকিছু দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছিল। এখন বিএনপি সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে। বরং ভারতকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে তারা ভারতীয় জাতীয় পণ্য বর্জনকে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সমর্থন দিচ্ছেন। 

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন যে, এটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত নয়, দলীয় কর্মসূচি নয়। আবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বলেছেন যে, রুহুল কবির রিজভী নিজেই বলেছেন যে, এটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে করছেন। অর্থাৎ এই কর্মসূচির ব্যাপারে বিএনপির মৃদু, মৌন এবং পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে। ফলে বিএনপি চায় যে, ভারত বুঝুক যে, তারা বিএনপির সঙ্গে যদি একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না করে তাহলে বাংলাদেশে ভারত বিরোধী রাজনীতি আবার উস্কে দেওয়ার ক্ষমতা বিএনপির কাছে। ভারত যেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুটি দলের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে সম্পর্ক রাখে সেই বার্তাটি দেওয়ার জন্যই ভারতকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। সামনের দিনগুলোতে বিএনপি আরও কিছু ভারতবিরোধী কর্মসূচিকে ইন্ধন এবং সমর্থন জানাবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭