ইনসাইড পলিটিক্স

সরকার বিরোধী হয়েও দল বাঁচাতে পারবেন জিএম কাদের?


প্রকাশ: 27/03/2024


Thumbnail

জিএম কাদের এখন ঘরে বাইরে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার দলের ভরাডুবি হয়েছে। গত নির্বাচনের চেয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কম আসন পেয়েছেন। দলের ভিতরে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পার্টি একটা বড় ধরণের ভাঙনের মুখে পড়েছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করছে। এত কিছুর পর দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা জিএম কাদের এখন একটা বড় সমস্যা। কিন্তু তারপরও জিএম কাদের তাদের সরকার বিরোধিতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছেন। 

জি এম কাদের মনে করছেন যে, সরকারের বিরোধিতা করলে দলের জনপ্রিয়তা হয়তো বাড়তে পারে। আর তাতে দল টিকে থাকতে পারে। এ কারণে তিনি যেমন গোপনে সুশীল সমাজের সাথে এখনও সম্পর্ক রক্ষা করে চলছেন, তেমনি বিএনপির সাথে ঐক্যের বিষয়টি উড়িয়ে দেননি। আজ তিনি বিতর্কিত দৈনিক এবং সুশীল সমাজের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে নিজের নামে একটি কলাম লিখেছেন। ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসলে কেমন হল’ সে নিয়ে লিখিত কলমে জিএম কাদের লিখেছেন আশঙ্কাজনক উপলব্ধি। ফলে ৪২ শতাংশ ভোট পড়ার দাবি বাস্তবসম্মত মনে করি। বরং ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি হয়ে ভোট দিয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণা। 

স্বভাবতই প্রশ্ন আসে কী ভাবে ৪২ শতাংশ ভোট গণনায় এলো। এটা সম্ভব, যদি বেশ কিছু ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মেরে প্রার্থীদের পক্ষে দেখানো হয় অথবা ব্যালট গণনা বাদেই নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের পছন্দমতো ফলাফল তৈরি ও ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনের বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেই প্রতিবেদনে কেউ ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নি। ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একমাত্র টিআইবি। তার তথাকথিত গবেষণা জরিপে। আর এতদিন পর জিএম কাদের এই ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করলেন। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে জিএম কাদেরের এই বক্তব্য স্ববিরোধী। কারণ জিএম কাদের নিজে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এবং সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে অভিষিক্ত হচ্ছে। নির্বাচন যদি কারচুপি পূর্ণ হয়, ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহলে একজন সৎ দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার সংসদে বসার কথা না। ওই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। এই নির্বাচন নিয়ে তার কথা বলা উচিত। কিন্তু তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বসছেন। মন্ত্রী পদ মর্যাদার সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। আবার নির্বাচনে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এটি কি তার স্ববিরোধিতার নয়? 

বিভিন্ন মহল মনে করেন যে, এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগতে থাকা জিএম কাদের মনে করছেন, যদি তিনি বিএনপির সঙ্গে জোট করেন এবং তীব্র সরকার বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাহলে জনগণ তার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো একটি রাজনৈতিক দলের যদি সংগঠন না থাকে, রাজনৈতিক নেতা যদি জনগণের কাছে বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন না হন তাহলে সে সংগঠন গড়ে উঠতে পারে না। জিএম কাদের একদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন অন্যদিকে নির্বাচনের সমালোচনা করছেন। একদিকে সংসদে যাচ্ছেন অন্যদিকে ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন। একদিকে তিনি সরকারি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন অন্যদিকে তিনি সরকারকে গালি দিচ্ছেন। এই স্ব বিরোধিতার কারণেই জাতীয় পার্টি আজ অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে এবং এই জাতীয় পার্টি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭