ইনসাইড বাংলাদেশ

ব্যাংকের ক্যাশ ভোল্ট থেকে গ্রাহকের টাকা লোপাট, শাখা ব্যবস্থাপক আটক


প্রকাশ: 28/03/2024


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ক্যাশভোল্টে গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার হদিস মেলেনি। শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিন বিরুদ্ধে এ টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, তিনি নিজের ইচ্ছে মতোই গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন। এ ঘটনায় পৃথক পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিস।  

 

বুধবার (২৭ মার্চ) শাখাটিতে গিয়ে কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম ইউবিং ফ্যাক্টরির প্রোপাইটার আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সাথে, তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লক্ষ টাকর সি সি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনো লোনটি উত্তোলন করেননি। কিন্তু তার ব্যাংক হিসাব দেখা যায় তিনি পুরো টাকাটি উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেক থেকে টাকাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হতবাক হয়ে তিনি ঠিক কি করবেন তা বুঝতে পারছেন না।

 

একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাবে তার অজান্তেই ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

 

শুধু সিসি লোন হিসাবে নয় ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসেবেও এমন জালিয়াতি করা হয়েছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসেবে ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে আছে মাত্র ১ লক্ষ ৫ হাজার ১১২ টাকা।

 

মজার বিষয় হল এ সকল লেনদেনে গ্রাহকরা তাদের ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন প্রকার এসএমএস গ্রাহকরা পাননি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে, ম্যানেজার তাদের বলেন সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পান না।

 

এ ঘটনায় জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক, এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার। এর আগে সোমবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

তামাই শাখার কেজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনে কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচার তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

 

কেন স্বাক্ষর করেছেন এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাদের আইডির মাধ্যমে টাকা গুলো দেয়া হতো।’

 

এসকল বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে তদন্ত কমিটি ব্যবস্থা নিবে।'

 

এ ঘটনায় রবিবার (২৪ মার্চ) রাতে তামাই শাখার ব্যাংক ম্যানেজার সহ আরো দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখা হইতে ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিন (৪২), সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম (৩৪), ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩১) । এদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

 

তদন্ত কমিটির প্রধান জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নিবেন। যে সকল গ্রাহকের ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ 

 

উল্লেখ্য, গত রবিবার (২৪ মার্চ) জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ব্যাংকের ক্যাশ ভোল্ট থেকে ৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পরে। পরে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ব্যাংকের ম্যানেজার সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

 

হিসাব অনুসারে তামাই শাখার ক্যাশ ভোল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লক্ষ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা রয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭