ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় চীন


প্রকাশ: 29/03/2024


Thumbnail

চীনা রাষ্ট্রদূত গতকাল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পাট এবং বস্ত্র খাতে বাংলাদেশে চীনের কোন বিনিয়োগ নেই। এমনকী চীনের এ ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহের কথাও জানা যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এই হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এর সাথে চীনা রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে পাট পাটজাত পণ্য রপ্তানির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। 

শুধু তাই নয়, অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার ব্যাপারেও চীনা রাষ্ট্রদূত আগ্রহ দেখিয়েছেন। হঠাৎ করে পাট কেনায় চীনের আগ্রহ হল কেন—এ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটার আগ্রহ দেখিয়ে আসলে চীন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে চাইছেন এবং তাদের চীনের প্রতি মনোভাব জানার জন্য চেষ্টা করছেন। এটি আসলে কেনাকাটার বৈঠক নয়, বরং রাজনৈতিক বৈঠক। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্কের কথা শোনা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ভারতের একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এসেছেন, যেখানে আওয়ামী লীগের আরও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ গেছে। পঁচাত্তরের পরে যে সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভারত দীর্ঘদিন গভীর সম্পর্ক রেখে চলেছেন, তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক অন্যতম। আর এই কারণেই জাহাঙ্গীর কবির নানক এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত—এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে চীনের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের রাষ্ট্রদূত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করছেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। এই অঞ্চলকে ঘিরে চীনের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই উপমহাদেশে চীনের কর্তৃত্ব এবং প্রভাব বেড়েছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপে চীন এখন ভারতকে প্রায় হটিয়ে দিয়েছে। 

বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনের আগ্রহ দীর্ঘদিনের। কিন্তু বাংলাদেশে চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হল যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, সোজাসাপটা পররাষ্ট্র নীতি এবং কৌশল। আওয়ামী লীগ ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এই নীতিতে বিশ্বাস করে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ চীনের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখছে, ঠিক তেমনই একইভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। চীনের সঙ্গে যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি ভারতের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা এক আবেগ এবং অনুভূতির সম্পর্ক রয়েছে। দুটি সম্পর্ক আলাদা আলাদা এবং ভিন্ন। দুটি সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ এই ধারাটিকে অব্যাহত রাখছে। তবে চীন এখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে মনোযোগী বলে মনে করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, চীন এখন বেছে বেছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে নানা রকম ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগের টোপ দিচ্ছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে চাইছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে ভারত বিরোধী স্লোগান এবং ভারত বিরোধী উচ্চারণ তার পিছনেও চীনের একটা হাত রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আর এ সমস্ত কারণে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭