ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে কমিউনিস্টদের দিন কি শেষ হয়ে গেল?


প্রকাশ: 29/03/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগেই কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। 

মুক্তিযুদ্ধের পরও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ছিল গভীর। বঙ্গবন্ধু যখন সবগুলো দলকে সমন্বয় করে বাকশাল গঠন করেছিলেন। সেখানেও কমিউনিস্ট পার্টি যোগ দিয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলগুলো বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিল, নির্যাতন ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি অন্যতম। আর এই ধারা অব্যাহত ছিল এরশাদের পতন পর্যন্ত। 

এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির সেই সম্পর্ক নেই। বরং কমিউনিস্ট পার্টি এখন আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক। কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিদিনই আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আগের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। মনি সিংহ বা মোহাম্মদ ফরহাদ এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনার যে গভীর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, এখনকার কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। তারপরও আওয়ামী লীগের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির একটি ঐতিহাসিক অবস্থান রয়েছে। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় কমিউনিস্ট পার্টি থেকে অনেকেই মুক্তচিন্তা এবং প্রগতিশীল ধারার মূল শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিবেচনা করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। বিভিন্ন সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির অনেক গুণী বড় নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন এবং আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত ছিল। বিশেষ করে ২০০৭ সালে এক-এগারো ঘটনার পর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব বাড়বে। এই সময়ে দেখা গেছে যে, কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিল এমন নেতারাই মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের সংস্কার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সময়ে পাদপ্রদীপে আসেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, নূহ-উল-আলম লেনিন, নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো কমিউনিস্ট নেতারা, যারা একসময় কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগে এসে এক-এগোরার মাধ্যমে অনেক পাদপ্রদীপে আসেন এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, সেই মন্ত্রিসভায় কমিউনিস্টদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত বেশি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সমালোচনা হয়েছিল। সেসময় বেগম মতিয়া চৌধুরী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আসা আব্দুল মান্নান খান। এই সময় নূহ-উল-আলম লেনিনও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগে কমিউনিস্ট পার্টি গ্রাস করে ফেলেছে এমন কথাও শোনা গিয়েছিলো সেই সময়। 

তবে ২০১৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব কমে। আস্তে আস্তে সেই প্রভাব কমতে শুরু করেছে। এখন আওয়ামী লীগে একমাত্র মতিয়া চৌধুরী ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আসা কেউই প্রেসিডিয়ামে নেই, কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী আছেন, যিনি একমাত্র ছাত্র ইউনিয়ন এবং ন্যাপের রাজনীতি থেকে এসেছেন। আর অন্য যারা ছিল যেমন, নূহ-উল-আলম লেনিন, আব্দুল মান্নান খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ তারা প্রত্যেকে এখন উপদেষ্টা মণ্ডলীতে স্থানান্তরিত হয়েছেন। অর্থাৎ আলঙ্কারিক পদে চলে গেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভাতেও এবার কমিউনিস্টদের তেমন ঠাঁই হয়নি। একমাত্র ইয়াফেস ওসমান সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এবং ইউকসুর ভিপি হিসেবে টিকে আছেন। তবে কমিউনিস্ট পরিচয়ের চেয়েও তার বড় পরিচয় তিনি শওকত ওসমানের ছেলে। তাহলে কি আওয়ামী লীগে কমিউনিস্টদের অধ্যায় সমাপ্তি হয়ে যাচ্ছে? আওয়ামী লীগ থেকে কি কমিউনিস্ট এবং অন্যান্য বামরা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন? সময় তা বলে দেবে। কিন্তু আপাতত কমিউনিস্ট পার্টির আধিপত্য আওয়ামী লীগের মধ্যে একেবারেই অনেকটাই খর্ব হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭