ইনসাইড বাংলাদেশ

পাহাড়তলীতে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বে বাড়ছে মাদক ব্যবসায়


প্রকাশ: 30/03/2024


Thumbnail

কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী যেন হয়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও পাচারকারীদের আখড়া। টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাথে এ এলাকার বসবাসকারী পুরাতন রোহিঙ্গাদের সাথে গড়ে উঠেছে নিবিড় সম্পর্ক। ক্যাম্প থেকে ইয়াবা এনে নিরাপদে ঘরে রেখে তা বিক্রি এবং পাচারের জন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সব চেয়ে নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছে পাহাড়তলী এলাকা। সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

 

কক্সবাজার পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এই বৃহত্তম পাহাড়তলীতে অন্তত ১০ হাজার নতুন পুরাতন রোহিঙ্গা বসবাস করে। তাদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জন সক্রিয়ভাবে এই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত আছে বলে জানায় স্থানীয় অনেকে।

 

কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ওসমান সরওয়ার টিপু বলেন, ‘আমার বলতে দ্বিধা নেই কক্সবাজার পৌর এলাকার মধ্যে সব চেয়ে বেশি রোহিঙ্গার বসবাস হচ্ছে আমার ৭ নং ওয়ার্ডে। তার মধ্যে বৃহত্তর পাহাড়তলীতে বেশি। এখানে পুরাতন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা স্থায়ী ভাবে বাড়িঘর বা বহুতল ভবন করে বসবাস করছে। তাদের প্রায় সবার ভোটার আইডি, জন্ম নিবন্ধনসহ স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট হয়ে গেছে। এখন পুরাতন রোহিঙ্গারাই নতুন করে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা এনে এখানে স্থায়ী করছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের মধ্যে অনেকে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত। মোট কথা এখানে ১০০ টি অপরাধের মধ্যে খুব বেশি হলে ১০ টিতে স্থানীয় মানুষ থাকলেও বাকি ৯০ টি অপরাধ করছে রোহিঙ্গারা। এখানে প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে সাবাড় করছে রোহিঙ্গারা, তাদের আশ্রয় দিচ্ছে কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আমার খুব খারাপ লাগে পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রশাসনকে খবর দিলেও তারা আসেনা, বরং নানান ভাবে রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেয়।’

 

পাহাড়তলীর সমাজ কমিটিসহ স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বৃহত্তর পাহাড়তলীতে অন্তত ২০০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছে,যাদের মধ্যে বড় ধরনের গড ফাদার আছে অর্ধশতাধিক আর বাকিরা খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং পাচারকারী। এদের মধ্যে বেশির ভাগই রোহিঙ্গা।

 

স্থানীয় সূত্র হতে জানা যায়, রোহিঙ্গা নাছির উদ্দিন ও তার স্ত্রী (রোহিঙ্গা) ছেনু প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা এনে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। তাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে অনেক মহিলা পাচারকারীও।  এছাড়া আবদুল হকের ঘোনার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা শাহ আলম কিছুদিন আগেও ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে জামিনে এসে আরো ব্যাপক আকারে ইয়াবা ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা কবির আহামদের ছেলে হামিদ হোসেন এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত। তার বাড়িতে এখন ক্যাম্প থেকে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা আসা যাওয়া করে, তারা মাদক এনে বিক্রি করে টাকা নিয়ে নিয়ে যায়। আবার অনেক পতিতাবৃত্তিতেও জড়িত।

 

এছাড়া মালেক মুন্সির ঘোনার আমান উল্লাহ মাঝি, রোহিঙ্গা অলি উল্লাহ বৈদ্য নকল আইডি করে বর্তমানে স্থানীয় সাজলেও তাড়া ইয়াবা পাচার ও ব্যবসায়ের সাথে জড়িত রয়েছে।

 

এদিকে সিরাজের ঘোনা এলাকায় আলিশান বাড়ি করে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জঙ্গি হাবিব উল্লাহ ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ সাতকানিয়াতে আটক হয়ে জেল খেটে বের হয়। বর্তমানে সে আবারো বেপরোয়া ভাবে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে তার পিতা ইমাম হোসেন ভাই নুর আহামদ সহ বাড়ির মহিলারাও নিয়মিত ইয়াবা পাচার করে। সম্প্রতি ইসলামপুর এলাকার আলিশান বাড়ি করেছে রোহিঙ্গা কিসমত আরা। তার ভোটার আইডি নং ১৯৯৮১৫৯১০১৯০০০৪৪১। তার স্বামী আজিজ প্রবাসে থাকলেও বাড়িতে নিয়মিত রোহিঙ্গাদের আড্ডা হয় এবং এরা সকলেই ইয়াবা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।   

 

এদিকে হালিমা পাড়া এলাকায় বর্তমানে বড় ইয়াবা গড ফাদার হচ্ছে হামিদ উল্লাহ এবং আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহর পিতা মৃত কামাল ফকির জীবিত থাকতে ক্যাম্প থেকে রেশন আনতো এবং তার মৃত্যুও হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সে হিসাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবদুল্লাহর রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। যা ব্যবহার করে সে চালিয়ে যাচ্ছে তার ইয়াবা ব্যবসায়।

 

সম্প্রতি ইয়াবা ব্যবসার প্রচলন বেড়েছে পাহাড়তলীর ইসুলু ঘোনাতে। এই এলাকার ইয়াবা ব্যবসার জনক বলা হয রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম মাঝির ছেলে আরিফকে, সে তার ভাই শফিক ও মরিয়ম নামের এক নারী কিছুদিন আগেও ইয়াবা সহ আটক হয়েছিল। এছাড়া ইসুলু ঘোনার মান্নানের ছেলে পারভেজ, একই এলাকার জসিম নামের এক শীর্ষ মাদক কারবারিও কিছুদিন আগে নোহাগাড়ী সহ ইয়াবা নিয়ে আটক হয়েছিল। বর্তমানে এলাকাতে অন্তত অর্ধ শতাধিক তরুণ তাদের হয়ে কাজ করছে।

 

এ ব্যাপারে পাহাড়তলী এলাকার নুরু মোহাম্মদ সওদাগর বলেন, ‘পাহাড়তলীতে আমাদের বাড়ি সেটা পরিচয় দিতে এখন সমস্যা হয়। কারন এখানে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস করছে। তারা প্রতিনিয়ত ক্যাম্প থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন এনে বেপরোয়া ভাবে মাদক পাচার করছে। এমনকি ক্যাম্পে খুন করে এখানে এসে লুকিয়ে থাকে। মাদকের কারনে পুরো এলাকা এখন সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। অনেক বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে আটক হলেও কিছুদিনের মধ্যে জেল থেকে বের হয়ে আরো বেশি করে খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে।’

  

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় অব্যাহত আছে। আর পাহাড়তলী এলাকার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে অপরাধ প্রবণতা বেশি । তাই এই এলাকাতে আরো নজরদারী বাড়ানো হবে। একই সাথে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দিলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আরো সহজ হবে।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭