ইনসাইড পলিটিক্স

বিভেদ সামনে আনলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা


প্রকাশ: 31/03/2024


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিভেদ এখন প্রকাশ্যে আসছে বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগের আওয়ামী লীগের নেতারা। অনেক সংসদ সদস্য বিভেদ কমাতে উপজেলা নির্বাচনে দলের পক্ষে একক প্রার্থী চেয়েছেন। নতুবা সংসদ সদস্য ও তৃণমূলের নেতারা কাকে সমর্থন করবে—এই নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ওই অঞ্চলের অনেক সংসদ সদস্য দলের পক্ষ থেকে উপজেলায় একজন প্রার্থী ঠিক করে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।

শনিবার (৩০ মার্চ) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের দলীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে এসব প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি জানিয়েছেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিত করবেন। সময়মতো দলের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রোববার (৩১ মার্চ) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর দলীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক হবে।

আগামী ৪ এপ্রিল খুলনা বিভাগের জেলা নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। ওই বৈঠকে দলীয় বিভেদের পাশাপাশি ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ঈদের পর বরিশাল বিভাগের বৈঠক হবে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে কোনো বিভেদ বা মনোমালিন্য থাকলে তা মিটিয়ে দেওয়া।

ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তার বিভাগের বৈঠক হবে ২২ এপ্রিল। ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বৈঠকও ঈদের পর অনুষ্ঠিত হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দলীয় বিভেদ এবং উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে নির্দেশনা দিতে এসব বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে দলের তৃণমূলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠন ও দল পুনর্গঠনের কাজও চলবে। এই রমজানে সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়েও বৈঠক করা হয়েছে।

রংপুর বিভাগের বৈঠকে তৃণমূল এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে টাকাওয়ালাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার অভিযোগও করেন কোনো কোনো জেলা নেতা।

গতকাল শনিবার (৩০ মার্চ) রংপুর বিভাগের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বলছে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের অংশ নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে না হলেও বিএনপি-জামায়াত ব্যক্তিগতভাবে ভোটে অংশ নেবে। অন্যদিকে একেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচ-সাতজন করে। ফলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সহজ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন ও নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না থাকলেও দল–সমর্থিত প্রার্থী দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ করেন। 

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, উন্মুক্ত থাকায় দল বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা কার পক্ষে কাজ করব? কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলে প্রতীক না থাকলেও একজনকে সমর্থন দেওয়া হলে তাঁর জন্য সবাই কাজ করতে পারবে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কেন্দ্র, জেলা ও উপজেলা একজনকে সমর্থন দিলে নেতা-কর্মীদের কাজ করতে সুবিধা হবে, তা না হলে জামায়াত জিতে যাবে। নীলফামারী সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর কারণে জামায়াত–সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় রংপুর বিভাগের রাজনৈতিক সমস্যার কথা শোনেন ওবায়দুল কাদের। তিনি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাজাহান খান, হাছান মাহমুদ ও সুজিত রায় নন্দীকে নির্দেশনা দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘বিরোধী দল নির্বাচনে এলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা সময়ই বলে দেবে। কারণ, সেখানে বিজয়ের জন্য আমাদের ভালো ও জনপ্রিয় নেতাকে প্রার্থী করতে হবে। এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে সেখানে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে না, জেলা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, একজন সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তৃণমূলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের সুযোগ দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ভোটাভুটি ছাড়াই মতামতের ভিত্তিতে কমিটি হয়ে যায়।

এ বক্তব্য সমর্থন করে লালমনিরহাটের একজন সংসদ সদস্য বলেন, আমরা আদর্শের রাজনীতি করব, নাকি টাকার রাজনীতি? এটা আগে ঠিক করতে হবে। ওই সংসদ সদস্য বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সহযোগী সংগঠনের কমিটি কেনাবেচা হচ্ছে। সহযোগী সংগঠনের নেতা নির্বাচনে জেলা নেতাদের মতামত নেওয়া হয় না। ফলে জেলা নেতাদের কোনো মূল্য দেন না সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, আমার আসনে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এক এমডি প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি অনেক টাকাপয়সা খরচ করেছেন। নেতা-কর্মীদের মাঝে টাকার লোভ ঢুকিয়েছেন।

একটি জেলার নেতা অভিযোগ করেন, জীবনবৃত্তান্ত আর চিঠি দিয়ে তৃণমূলের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আরেকজন নেতা অভিযোগ করেন, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৃণমূলে ইচ্ছেমতো কমিটি দিয়ে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন।

জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থীরা যে বেকায়দায় পড়েছিলেন, সে বিষয় নিয়েও বৈঠকে কথা উঠেছিল। সেখানে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমার আসনে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এক এমডি প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি অনেক টাকাপয়সা খরচ করেছেন। নেতা-কর্মীদের মাঝে টাকার লোভ ঢুকিয়েছেন।’

পঞ্চগড়-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত। নির্বাচনের আগে তাঁর স্থলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সারোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন।

এ বিষয়ে সুজন বলেন, স্বতন্ত্র ভোট করার কারণে সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। যার জন্য সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তুমি তো (সুজন) নির্বাচন করেছ, কাকে দায়িত্ব (সভাপতি) দিয়েছ?’ জবাবে সুজন বলেন, ‘আমি তো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছি।’ জবাবে কাদের বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য তো মাঠ ওপেন রাখা হয়েছিল।’

গাইবান্ধায় দুটি আসনে শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দুটি আসনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী লাঙ্গলের ভোট করেছেন। কিন্তু সেখানে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর জন্য এখন দলের নেতারা বিপদে আছেন বলে গাইবান্ধা জেলার একজন নেতা জানান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭