ইনসাইড পলিটিক্স

বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব


প্রকাশ: 31/03/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের বেড়ে ওঠা, আওয়ামী লীগের বিকাশ এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা প্রতিটি ধাপে বুদ্ধিজীবীদের অবদান রয়েছে। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লেখক, বুদ্ধিজীবীদের দিকে আলাদাভাবে নজর দিতেন। তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করতেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করতেন, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। বঙ্গবন্ধুর সময় অনেক বুদ্ধিজীবী আওয়ামী লীগের সঙ্গে শুধু ঘনিষ্ঠই হয়নি, তারা স্বাধীনতা এবং স্বাধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ আওয়ামী লীগকে যেমন ঋদ্ধ করছিল, তেমনই বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন এবং বাঙালি জাতির বিকাশের ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখেছিলেন। বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ একটি অভিন্ন সত্তার নাম। আর একারণেই বুদ্ধিজীবীরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন তাদের আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প ছিল না। 

জাতির পিতার মৃত্যুর পর বাংলাদেশি লেখক, বুদ্ধিজীবীরা তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে দাঁড়িয়ে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। তিনিও লেখক বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখেন এবং এই সুসম্পর্কের ভিত্তিতে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণের আন্দোলন শুরু হয়।

বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এবং ধর্মান্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে লেখক, বুদ্ধিজীবীরা সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শক্তিকে মেধা মনন দিয়ে বিকশিত করেছেন লেখক, বুদ্ধিজীবীরা। আওয়ামী লীগের ৮১ এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে লেখক, বুদ্ধিজীবীরা বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির পাশে থেকেছেন। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও লেখক, বুদ্ধিজীবীদেরকে আলাদা গুরুত্ব দিতেন, মর্যাদা দিতেন এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। কিন্তু আস্তে আস্তে সেই ধারা যেন পাল্টাতে শুরু করেছে। এখন আওয়ামী লীগ লেখক, বুদ্ধিজীবীদেরকে খুব একটা আমলে নেয় বলে মনে হয় না। 

টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা আসার পর আওয়ামী লীগ যেমন রাজনৈতিক ভাবে একলা অবস্থান গ্রহণ করেছে, ঠিক তেমনই
লেখক, বুদ্ধিজীবীদেরকেও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। যে সমস্ত লেখক, বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন টকশোতে, লেখালেখিতে আওয়ামী লীগ বন্দনা করছেন, তারা অপাংক্তেয়। অনেকেই দুঃখ করে বলেন যে, তাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই জন্যই তারা এই অবস্থায় আছেন। 

আওয়ামী লীগের পক্ষে বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে যে সমস্ত লেখক, বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেন তারা কেউ কিছু পাওয়ার আশায় করেন আবার কেউ নিজেদের বিবেক থেকে বলেন। কিন্তু আগের মতো বুদ্ধিজীবীদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অহংকার বা আলাদা একটা পক্ষপাত এখন আর দেখা যায় না। আওয়ামী লীগপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও এখন অনেক দূরে এবং গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন। 

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর পর শিক্ষক এবং লেখক হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বুদ্ধিজীবীরা সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে খুব একটা জায়গা পান না। অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো লেখক, বুদ্ধিজীবীরা কালেভদ্রে দেখা পান। সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ এখন নেই। 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ড. আতিউর রহমান, ড. আবুল বারকাত কিংরা বিনায়ক সেন এর মতো ব্যক্তিত্বরাও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে খুব একটা জায়গা পান না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদান রাখা বুদ্ধিজীবীরাও এখন খুব একটা সুদিন নেই। তাদের জন্য কোন সুখবরও নেই। কালেভদ্রে কোন অনুষ্ঠানে দল বেঁধে তাদেরকে ডাকা হয় গণভবনে চা পানে বা নৈশ্যভোজে আপ্যায়িত হয়ে তারা ফিরে আসে। কিন্তু সরকারের নীতি নির্ধারণী কিংবা সরকারের কর্মকাণ্ডে বুদ্ধিজীবীদের গুরুত্ব একেবারে নেই বললেই চলে। এর একটা প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হয় যে, আমলারা চারপাশ এমন ভাবে ঘিরে ফেলেছেন যে, এখন বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান সরকারের নীতি নিধারর্ণীতে নেই। বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেই উপলদ্ধিও হারিয়ে ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭