এডিটর’স মাইন্ড

যুক্তিহীন চুক্তিতে অচল প্রশাসন


প্রকাশ: 01/04/2024


Thumbnail

বাংলাদেশ এখন কারা চালাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো নানা ধরনের মত দেবেন। কেউ বলবেন, এটা আবার কোন ধরনের প্রশ্ন? আওয়ামী লীগই দেশ চালাচ্ছে গত ১৫ বছর ধরে। সামনের পাঁচ বছর আওয়ামী লীগই দেশ চালাবে। আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠীরা বলবে, বিদেশি প্রভুরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছে। আসলে দেশ চালাচ্ছে তারাই। ক্ষমতাহীন রাজনীতিবিদরা বলবেন, দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। তাদের হাতেই সব কলকাঠি। মন্ত্রী, এমপিরাই সব অলংকার। আর আমলারা বলবেন, দেশ চালাচ্ছেন চুক্তিতে থাকা এক ডজন আমলা। একটা সিন্ডিকেট। প্রশাসনের সব শীর্ষ পদ এই চুক্তিভিত্তিক আমলারা দখল করেছেন, তারাই দেশ চালান এখন।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। আর জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থাকার কথা। কিন্তু আপনি বাংলাদেশ কীভাবে চলছে, তা যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন, দেশ চলছে আসলে চুক্তিতে। চুক্তিতে থাকা কতিপয় দেবদূতই এখন এ রাষ্ট্রের ভাগ্য বিধাতা। প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ এখন চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের দখলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে রাজউকের চেয়ারম্যান। মুখ্য সচিব থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান—সব চুক্তির দখলে। শুধু আমলা কেন? কোথাও কোথাও চুক্তি যেন আমৃত্যু ঠিকাদারি। ওয়াসার এমডির চুক্তি শেষ হবে না কোনোদিন। চুক্তি থেকে মুক্তি নেই নিউরো অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের। এরকম উদাহরণের অভাব নেই।

একটি রাজনৈতিক সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য থাকে। যেসব লক্ষ্য নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ করা হয়। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নই একটি সরকারের প্রধান কাজ। আর এ কাজে মূল চালিকাশক্তি হলো প্রশাসন। একটি সরকার প্রশাসনের মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে। এ কারণে যে কোনো শাসনব্যবস্থায় প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনকে বলা হয় সরকারের হৃৎপিণ্ড। প্রশাসনের মাধ্যমে একটি সরকারের অভিপ্রায় সঞ্চারিত হয় তৃণমূল পর্যন্ত। প্রশাসন যত দক্ষ, দায়িত্বশীল এবং সচল থাকে সরকারও তত সফল হয়। সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে প্রশাসনের তাল মেলানোটা তাই অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসন যদি সরকারের লক্ষ্য অর্জনে ঠিকঠাকভাবে কাজ না করে, তাহলে সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। এ কারণে রাজনৈতিক সরকার এমন প্রশাসন চায় যারা সরকারের আদর্শ, নীতি ও কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়। সরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানে ও বোঝে।

এজন্য সব গণতান্ত্রিক দেশে আমলাতন্ত্রকে এখন ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুরোপুরি রাজনৈতিক। প্রেসিডেন্ট বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন আপাদমস্তক বদলে যায়। আগামী নির্বাচনে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হন, তাহলে বাইডেনের সময়ে নিযুক্ত কর্মকর্তারা বিদায় নেবেন। ব্রিটিশ প্রশাসন রক্ষণশীল। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রশাসনে তার আঁচড় খুব একটা পড়ে না। বলা হয়, ব্রিটেনে আমলাতন্ত্রই একমাত্র স্থায়ী। এ উপমহাদেশ প্রশাসন বিন্যাসে ব্রিটিশ ঐতিহ্য ও রীতি ধারণ করেছে। এখানে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে প্রশাসনের পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা আমলাই খুনি মোশতাকের শপথ করিয়েছিলেন। তিনি আবার জিয়ার আমলেও জেল থেকে বেরিয়ে পদাবনতি নিয়ে লজ্জাহীনভাবে চাকরি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে আমলারাই জিয়ার সঙ্গে সাফারি স্যুট আর সানগ্লাস পরে খাল কেটেছেন। তারাই এরশাদের আমলে ক্ষমতাবান ছিলেন। এরশাদের বিশ্বস্ত আমলারাই খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজন হয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমলারা গিরগিটির মতো রং পরিবর্তন করেন। তবে সব আমলাই চাটুকার এবং ‘যখন যার তখন তার’ নীতিতে চলেন না। আমলাদের মধ্যে কারও কারও রাজনৈতিক চেতনা এবং আদর্শ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনীতি, পারিবারিক পরিচিতি ইত্যাদি নানা কারণে আমলাদের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা এবং নিজস্ব মত থাকে। অনেকেই তার আদর্শিক অবস্থান পাল্টে ফেলতে পারেন না। একটি সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের পক্ষের লোকজন ভিন্নমতের আমলাদের চিহ্নিত করেন। একটি দল ক্ষমতায় এলে কিছু আমলা ক্ষমতাবান হন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়। আবার কেউ কেউ কোণঠাসা হন রাজনৈতিক বিবেচনায়। এসব সত্ত্বেও ১৯৯১ সালের আগে প্রশাসনের দলীয়করণ এবং রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজার সংস্কৃতি খুব একটা ছিল না। ’৯১ সালে নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আমলাতন্ত্রে আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠী রাতারাতি খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নেতাদের নৈকট্য অর্জন করেন। বিএনপিতে তখন প্রাক্তন চীনাপন্থিদের দাপট। আমলাদের মধ্যে সাবেক চৈনিক বামরা সহজেই বিএনপির নীতিনির্ধারক হয়ে যান।

এ সময় প্রশাসনে আওয়ামীপন্থিদের খারাপ পোস্টিং, পদোন্নতি না দেওয়ার রীতি শুরু হয়। তবে প্রশাসনে রাজনীতিকরণ চরম আকার ধারণ করে ২০০১ সালে। ২০০১ সালে জুলাইয়ে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিয়ে একমুহূর্তে ১৩ সচিবকে বদলি করেন। তখন থেকে আমলাতন্ত্রে যে হিংস্র প্রতিহিংসা এবং দলীয়করণের সূচনা হয়, তা এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে প্রশাসনে আওয়ামী নির্মূল কার্যক্রম শুরু করে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক থাকা কর্মকর্তারা বিএনপি-জামায়াতের রোষানলে পড়েন। সংখ্যালঘু হলে তো কথাই নেই। গোপালগঞ্জে বাড়ি হলে চাকরি থেকেও নেই। তাদের পদোন্নতি আর আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া যেন একই ব্যাপার। এ সময় আবার কিছু দুষ্টু আমলা প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েলের রাজনৈতিক কৌশল নেন। একজন আমলাকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বানিয়ে দিলেই তাকে ল্যাং মারা খুব সহজ হয়ে যায়। এভাবে আমলাতন্ত্রের ভেতর শুরু হয় নোংরা খেলা। প্রশাসনের রাজনীতিকরণ ভয়াবহ রূপ নেয় ‘হাওয়া ভবনে’র মাধ্যমে। পদোন্নতি, ভালো পোস্টিং পেতে ঘুষ দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়। আমলাতন্ত্রে ‘ভাইয়া গ্রুপের’ উদয় হয়। যারা সিনিয়রদের ওপর ছড়ি ঘোরানো শুরু করেন ভাইয়া গ্রুপের পুঁচকে আমলারা। প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। রাজনৈতিক চোরাবালিতে আটকে যায় আমলাদের পেশাদারিত্ব। মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা নয়—আমলাদের পদোন্নতির মাপকাঠি হয় চাটুকারিতা, অতীত রাজনীতি এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে আমলাতন্ত্রে পেশাদারিত্ব পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। এ সময়ে প্রশাসনে দলীয়করণ এবং পক্ষপাত প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এখন মেধা যোগ্যতায় তদবির ছাড়া প্রশাসনে নির্বিঘ্নে পদোন্নতি পাওয়া যায়—এটা কেউ বিশ্বাসই করে না। টানা ক্ষমতায় থাকার জন্য এখন প্রশাসনে সবাই আওয়ামী লীগ। কে কার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগ, তা নিয়ে যুদ্ধ হয়। আওয়ামীপন্থি বিপুল আমলার মধ্যে তারাই এগিয়ে যান যারা চাটুকারিতার ঝাড়ফুঁক ভালো জানেন। যে যত বড় চাটুকার, পদোন্নতি তার। সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কলাকৌশল যারা যত বেশি ভালোভাবে রপ্ত করেছেন, তাদের ভালো পদায়ন হয়েছে। আমলাতন্ত্র এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে যেমন অনেক নেতা মেয়াদ শেষ হলেও দায়িত্বে থাকেন, তেমনি প্রশাসনেও আমলারা ৫৯ বছরের অবসরে অনিচ্ছুক। আমলাদের মধ্যে ভাবখানা এখন এমন যে, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, তারাও ততদিন বিভিন্ন পদে থাকবেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কিংবা বিভিন্ন কমিশনে বা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়ে। প্রশাসনে রাজনীতিকরণের ক্যান্সারের মধ্যেই নতুন ব্যাধি হলো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এখন একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রথমে আওয়ামী লীগ হয়ে (কিংবা আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ হয়ে) দ্রুত বিভিন্ন পদোন্নতি নেন। এরপর সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ‘সচিব’ হন। তারপর চাটুকারিতার সর্বোচ্চ কসরত দেখিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের যে রীতি, তা একটি বিশেষ ব্যবস্থা। খুব জরুরি এবং অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়।

ধরা যাক, একজন সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওই মন্ত্রণালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলমান। এ ক্ষেত্রে ওই কাজটি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওই সচিবের পদে বহাল থাকাটা জরুরি। এমন ক্ষেত্রেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মহামারির আকার ধারণ করেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা কর্মকর্তারা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, রাষ্ট্রপতির সচিব, সংসদ সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান সবাই চুক্তিতে। এ তালিকায় সম্প্রতি কৃষি সচিবও যুক্ত হয়েছেন। দেশ এখন চলছে চুক্তিতে। একজন নিয়মিত আমলা যখন একটি মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনের সচিব পদে থাকেন তখন তার জবাবদিহি থাকে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু চুক্তিতে থাকা একজন কর্মকর্তার জন্য জবাবদিহি মুখ্য বিষয় নয়। তিনি বোনাস চাকরি উপভোগ করেন। চুক্তি পোক্ত রাখতে দেনদরবার করেন, রাজনৈতিক নেতার মতো জ্ঞান বিতরণ করেন। ভবিষ্যতে আবার চুক্তি পেতে কিংবা চুক্তি শেষে নতুন দায়িত্ব পেতে লবিং করেন। এই আমলা মন্ত্রী, এমপিদের পাত্তা দেন না, অধস্তনদের কথা শোনেন না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা কর্মকর্তা আজকের কথাই ভাবেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবেন না। এর ফলে তার কাছ থেকে জনগণ কিছুই পায় না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশাসনের মধ্যেও একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। একজন ব্যক্তির চুক্তি প্রশাসনে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার পদোন্নতির দরজা বন্ধ করে দেয়। চুক্তিতে থাকা চাটুকারদের জন্য মেধাবী সম্ভাবনাময় কর্মকর্তার পদোন্নতির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনে উদ্ভাবনী, সৃজনশীলতা এবং মেধার লালন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চুক্তির কারণে। এমন যদি হতো, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন। তার দক্ষতায় দেশের উপকার হয়েছে, তাহলে এর পক্ষে অন্তত একটা যুক্তি থাকত। কিন্তু যারা চুক্তিতে আছেন, তাদের কেউ নিজেদের চাকরি দীর্ঘস্থায়ী ছাড়া দেশের জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারেননি। এই যেমন ধরা যাক, এনবিআরের চেয়ারম্যানের কথা। দ্বিতীয় দফায় তিনি দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তার চুক্তি কি রাজস্ব আদায়ের সংকট কমাতে পেরেছে? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের চুক্তি কি বাজার অস্থিরতা কমাতে পেরেছে? সবক্ষেত্রেই এরকম প্রশ্ন উঠেছে এখন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি করছে হতাশা। তরুণ কর্মকর্তারা হতোদ্যম হয়ে পড়ছেন। যারা চুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, তাদের লক্ষ্য দেশ সেবা নয়, সচিব বা বড় কর্তা হিসেবে আরও কিছুদিন ক্ষমতা উপভোগই তাদের আরাধ্য। চুক্তিতে থাকা আমলারা শেষ চুমুক পর্যন্ত উপভোগ করতে চান, সবকিছু চেটেপুটে খেতে চান। নিজেকে ছাড়া কিছুই ভাবেন না। চুক্তিতে থাকা প্রত্যেক আমলা সরকার এবং রাষ্ট্রের জন্য বোঝা এবং দায়। নিজেদের স্বার্থে এরা জনগণের টাকা অপচয় করছেন। সচিবদের প্রায় অর্ধেকই এখন চুক্তিতে। এটা আওয়ামী লীগের নীতিগত অবস্থানের পরিপন্থি।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। আওয়ামী লীগ নিজেই তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, অনেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে ভিন্ন যুক্তি দেন। বলা হয়, এ দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩। ৬০ কিংবা ৬৫ বছর বয়সে এখন মানুষ ভালোমতো কর্মক্ষম থাকেন এবং সেবা দিতে পারেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার পেছনে রাষ্ট্রের জনগণ বিপুল বিনিয়োগ করে। অথচ যখন তিনি মেধা ও দক্ষতার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হন, তখনই তার অবসরের ঘণ্টা বাজে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অবসরে যান ৬৫ বছর বয়সে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর। তাহলে সরকারি কর্মকর্তারা কেন ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যাবেন? একই দেশে অবসরের বয়স ভিন্নতা কতটা যৌক্তিক, তা ভাবার সময় এসেছে। অবসরের বয়সসীমা বাড়ালে সবাই সমান সুযোগ পাবেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য লাজ-লজ্জাহীন তোষামোদীর প্রতিযোগিতাও বন্ধ হবে। একজন ব্যক্তির জন্য ১০ জনের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হবে না। চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক হবে না। সরকার যদি সিনিয়র আমলাদের বেশি দিনের সেবা চায়, তাহলে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করুক। কিন্তু চুক্তির অত্যাচার থেকে প্রশাসনকে মুক্তি দিক। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশাসনকে ক্রমেই বিকলাঙ্গ করছে। কয়েকজন স্তাবকের হাতে জিম্মি হচ্ছে প্রশাসন।


লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭