ইনসাইড থট

মোবাইল কোর্ট যেন হয়ে উঠেছে ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়বস্তু


প্রকাশ: 01/04/2024


Thumbnail

অনেকেরই ধারণা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা বুঝি একই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি একেবারেই একই নয়।  চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অংশ মাত্র। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে সামগ্রিক ধারণাকে বুঝায়। সেখানে প্রতিরোধ, প্রতিহত, পরিবেশ সহ সব কিছুই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আবার কিছু জিনিস আছে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে আবার কিছু বিষয় ফায়ার সার্ভিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। তবে এসব কিছুই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে পড়বে।

কিন্তু আমাদের অসুবিধা হচ্ছে প্রথম যখন কোন একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বা ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক হয় তখন সব কিছুই ঠিক আছে অনুমতি পাওয়ার জন্য। কিন্তু পরে দেখা যায় সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো আর কেউ থাকে না। বিভিন্ন উপকরণ সক্রিয় আছে কিনা, কার্যকরী আছে কিনা সেগুলো দেখার মতো পরে আর কেউ থাকে না। কোথাও ভেকসিন রাখা হলে সেগুলো সঠিক তাপমাত্রায় আছে কিনা, সেগুলো মেয়াদউত্তীর্ণ কিনা এগুলো দেখভাল করার মতো পরে আর কেউ থাকে না। এরকম প্রতিটি জিনিস দেখভাল করার জন্য আলাদা আলাদা দায়িত্ব প্রাপ্ত জনবল দরকার। এগুলো তো ফায়ার ব্রিগেড দেখবে না। ফায়ার ব্রিগেড দেখবে শুধু ফায়ারের বিষয়টি। সে শুধু সেটা নিশ্চিত করবে। এরকম প্রতিটি জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা ইউনিট থাকা দরকার। আর এগুলো ঠিক মতো করা হচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটা সমস্যা হলো প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। তাদের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই। অন্য জায়গা থেকে নিতে হয়। আবার অন্যান্য সংস্থাগুলো তারা তাদের মতো করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। ফলে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর একাধিক সংস্থা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এতে হয়রানি বাড়ে। মোবাইল কোর্ট যেন হয়ে উঠে ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়বস্তু। এতে করে বরং আরও প্যানিক তৈরি হয়। একটা সময় চিকিৎসকদের প্রতি, হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে যাবে। আর এটা যদি হয় তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে যাবে।

কিছুদিন আগে ভুটানের রাজা আমাদের দেশে এসে স্বাস্থ্য খাতের প্রশংসা করে গেলেন। কিন্তু আমরা যদি সেটা ধরে রাখতে না পারি তাহলে এই ব্যবস্থা আবার উল্টো দিকে চলতে থাকবে। সুতরাং আমাদের খুব বুঝেশুনে এগোতে হবে। আমাদের লোকবল বাড়াতে হবে। মোবাইল কোর্ট নামে কোন ভাবেই হয়রানি করা যাবে না। এজন্য আমাদের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেই সম্ভব। তবে তাদের যেহেতু লোকবলের অভাব সেজন্য আমাদের লোকবল বাড়াতে হবে। এখন যেভাবে মোবাইল কোর্টগুলো পরিচালনার করা হচ্ছে সেটা একটা সভ্য দেশে হতে পারে না। কারণ একবার সিটি করপোরেশন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে, আরেকবার আরেকটি সংস্থা করছে। এতে করে একটা প্যানিক তৈরি হয় এবং সেটা খারাপ প্রভাব ফেলে। চিকিৎসা খাতের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। সুতরাং যে যখন পারছে অভিযান করছে এমনটা হতে দেওয়া যাবে না। এভাবে কতদিন চলবে? তাহলে তো সব সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু তা তো সম্ভব। এজন্য আমাদের লোকবল যেমন বাড়াতে হবে তেমনি একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।

আমি দেখেছি আমাদের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মধ্যে এধরনের প্রবণতা আছে। তার মধ্যে শতকরা ১০০ ভাগ চেষ্টা করার মানসিকতা আছে। তিনি কোন সময় আবেগের বশীভূত হয়ে বা কারও ওপর রাগ করে কোন সিদ্ধান্ত নেন না। তবে তিনি যে আবার রাতারাতি সব কিছুর পরিবর্তন করে দিবেন সেটা নয়। এর জন্য আমাদেরকে অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করতে হবে। একই সাথে আমাদের যিনি প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা আছেন তারও আন্তরিকতা সীমাহীন। আমি আগেও বলেছি এখন আবার বলছি যে, ডা. রোকেয়া এমন একজন মানুষ যিনি সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চল ঘুরেছেন এবং সেজন্য দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা আছে। এখন আমাদের উচিত তাদেরকে সহযোগিতা দেওয়া তাহলেই আমাদের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এক ছাতার মধ্যে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে পারবেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭