সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সংক্রান্ত এক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ঘুষ দুর্নীতিকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও ব্যবসা বান্ধব নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রিপোর্টটি এমন একটি সময়ে প্রকাশিত হল যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অনেকগুলো ব্যবসা খাতে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এরকম সময়ে এই রিপোর্টটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে অনেকেই ধারণা করছেন যে, বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাকফুটে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এ ধরনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।
শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার নতুন করে বিভিন্ন সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে বলেই ধারণা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশ সরকারের ওপর সাঁড়াশি চাপ প্রয়োগ করা ছিল অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এবং এই চাপের কারণে ভিসা নীতি এবং অন্যান্য সতর্কবার্তা জারি করেছিল ঠিক তেমনি আবার এখন নির্বাচনের পর নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বেগ অস্বস্তি এবং নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মূলত চারটি বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন করে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে;
১. ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ: এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের পরিবেশ ব্যবসা বান্ধব নয় এবং এখানে ঘুষ দুর্নীতি ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। এটির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানাল যে, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর সমুদ্র বন্দরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আগ্রহী এবং একাধিক মার্কিন কোম্পানি এই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সরকার টেন্ডার দিয়েছে। এটি যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবে হয় সেজন্য কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাপ দিল?
২. সুশাসন এবং মানবাধিকার: বাংলাদেশের সুশাসন এবং মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার নতুন করে কথা বলছে। এটির অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের ইস্যুটাকে সরাসরি ভাবে উত্থাপন না করে এটি সুশাসনের অভাবে উত্থাপন করার চেষ্টা করছে।
৩. সুশীল সমাজের সাথে সম্পর্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সুশীল সমাজের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সুশীলদের যেন চাপে রাখা না হয়, সুশীলের যেন সরকারের নীতি নির্ধারণী কর্মকাণ্ডে রাখা হয় সেজন্য একটি আহ্বান জানিয়েছে আসছে। এটি নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘটছে বলে একাধিক সূত্র মনে করছে।
৪. বিরোধী মত দমন এবং বিরোধী মতের অধিকার প্রতিষ্ঠা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় মনে করে যে, বিরোধী মতকে কথা বলার অধিকার দেওয়া উচিত। তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে এখনও সরকার বিরোধী দলকে যথাযথ স্পেস দিচ্ছে না বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। আর এসব নিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে নতুন করে দ্বদ্বে জড়াচ্ছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সমস্ত দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র আলাপ আলোচনা এবং কূটনৈতিক তৎপরতা ওপর নির্ভর করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর বুঝা যাবে আসলে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে। আর সেটি নির্ভর করবে নির্বাচনে কে জয়ী হবেন তার ওপর।