ইনসাইড বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জে প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ


প্রকাশ: 03/04/2024


Thumbnail

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান কাগজপত্রে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করেই বরাদ্দের টাকা ও চাউল আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২১-২২ অর্থ বছরের ২য় পর্যায়ের সাধারণ প্রকল্প কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পে চর কাদাই ব্রিজ হতে হাতেম সরকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মানের নামে ১ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে চর কাদাই আমিনুলের বাড়ি হয়ে রফিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে ১.৬০০ মেট্রিক টন চাউল। টি আর প্রকল্পে বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উন্নয়নের নামে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও কাদাই বাদলা পাকা রাস্তা হতে গোপিনাথপুর কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের নামে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। এবং ২১-২২ অর্থ বছরের ৩য় পর্যায়ের সাধারণ প্রকল্প টিআর চর কাদাই মোতালেবের বাড়ি হয়ে মুজাম্মেলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। কিন্তু কোন প্রকার কাজ না করেই প্রকল্পের বিল উত্তোলন করেছে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ।

 

কাগজ কলমে বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উন্নয়ন (টিআর) প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এবং অপর ৪টি প্রকল্পের সভাপতি সভাপতি ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম চান্নু । কিন্তু ৪টি প্রকল্পের কাজের বিষয়ে ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম চান্নু কিছুই জানেন না বলে জানান।প্রকল্পের বরাদ্দের ব্যাপার ধামাচাপা রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকল্পের কোন তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি।

 

উন্নয়ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকার হরিলুটে এলাকায় চলছে সমালোচনার ঝড়। ইউনিয়নবাসীর অনেকেই বলছে বরাদ্দের টাকা ও চাউল আত্মসাতের জন্যই সব প্রকল্পই চেয়ারম্যান তার নিজ এলাকায় দিয়েছে। অপরদিকে সচেতন মহলের প্রশ্ন কাজ না করে বিল উঠলো কিভাবে?

 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কোন ভাবেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা সম্ভব না বলে অনেকের ধারনা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চর কাদাই ব্রিজ হতে হাতেম সরকারের বাড়ি, আমিনুলের বাড়ি হয়ে রফিকের বাড়ি, মোতালেবের বাড়ি হয়ে মুজাম্মেলের বাড়ি একই রাস্তায়। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দে রাস্তা হয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান কোন কাজ করে নাই।

 

স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল বলেন, ‘এখানে আমি রাস্তা করার জন্য মাটি ভরাট করেছি। তবে শুনেছি ঐ জায়গায় পিআই অফিস প্রকল্প দিয়ে কাজ না করেই আমার কাজ দেখিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে।'


কাদাই বাদলা পাকা রাস্তা হতে গোপিনাথপুর কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত তো দুরের কথা এখানেও বিগত ১০ বছরের কেউ কখনো রাস্তা মেরামত করেনি এমনি অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা দিয়ে হাটা যায় না। বৃষ্টি হলে এ রাস্তা যেন এক রমক মরন ফাঁদ হয়ে যায়।


অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়নের নামে একটি হাজার লিটারের ট্যাংক এবং পরিষদের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার কাজ না করেই প্রকল্পের বিল তুলে নিয়েছেন উক্ত প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।

 

এ বিষয়ে বেলতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বিশেষ বরাদ্দের কাজের পর থেকে আমি কাজ করেছি। এবং গতকাল থেকে গোপিনাথপুর কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত কাজ ধরেছি। রং এর কাজ বাদ আছে তা আমি করিয়ে নিচ্ছি।’

 

কাজ না করেই বিল তুললেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কর্তৃপক্ষ দিতে পারে।’ এছাড়াও সংবাদ পরিবেশন করলে ভুল বোঝাবুঝি হবে, সম্পর্ক নষ্ট হবে বলেও সাংবাদিককে বলেন তিনি।

 

কাজ না করেই বিল উত্তোলনের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন করেন গিয়ে । চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন এগুলো নিয়ে যদি কোন ঝামেলা হয় তা আমি ম্যানেজ করবো। আপনি গিয়ে রফিকের কাছে ফোন ধরিয়ে আমাকে দেন।’

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প গুলোর ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। কাজ না করে যদি বিল তুলে থাকে তা তদন্ত করে প্রমাণিত হলে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা কিভাবে বিল দিলো সে বিষয়েও বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭