বেগম খালেদা জিয়াকে মুচলেকা দিয়ে বিদেশ পাঠানোর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। কিন্তু শামীম ইস্কান্দারের প্রস্তাবে রাজি হননি বেগম খালেদা জিয়া। আর এ কারণেই তাকে শেষ পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ফিরোজায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শামীম ইস্কান্দার সরকারের প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে শামীম ইস্কান্দারকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র মতে, নির্বাচনের আগেই শামীম ইস্কান্দার চেয়েছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে। কিন্তু সেই সময় বেগম জিয়া বিদেশে যেয়ে কী করবেন, কী বলবেন সে বিষয়ে সরকার ঝুঁকি নিতে চায়নি। আর এই ঝুঁকি না নেওয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর শামীম ইস্কান্দার সরকারের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেন এবং তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে বলেন, যেহেতু এখন নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে, রাজনীতিতে সরকার আর কোন বড় ধরনের ঝুঁকিতে নেই, এরকম বাস্তবতায় সরকার চাইলে বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে তার আলাপ আলোচনা শুরু হয়। শামীম ইস্কান্দার স্বপ্রণোদিত হয়ে বলেন, যদি সরকার তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। বিএনপির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্কও ত্যাগ করবেন। এছাড়াও বেগম জিয়া আরও কিছু ছাড় দিতেও রাজি আছেন বলে শামীম ইস্কান্দার জানান। এরকম বাস্তবতা গত ২৭ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আবার বাড়ানো হয় এবং পূর্বের শর্তে তা বাড়ানো হয়।
বেগম জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির পর তাকে বিদেশ নেওয়ার ব্যাপারে নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করেন তার ছোট ভাই। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বেগম জিয়াকে রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর এবং তিনি যে কোন সময় খারাপ অবস্থার দিকে চলে যেতে পারেন এমন একটি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর, তিনি সিসিইউতে আছেন। কিন্তু ৩ দিন পরেই রহস্যময়ভাবে বেগম খালেদা জিয়া বাড়িতে ফিরে যান এবং বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেন যে, তার অবস্থা যেহেতু স্থিতিশীল হয়েছে সেহেতু তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, শামীম ইস্কান্দার বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য যে সব সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন, সেই সব সমঝোতা প্রস্তাবে রাজি হননি বেগম খালেদা জিয়া। তিনি মনে করেছেন যে, এটি অপমানজনক এবং এই প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। আর এ কারণেই তিনি শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। বেগম খালেদা জিয়া ছোট ভাইয়ের প্রতি উষ্ম প্রকাশ করেছেন বলেও জানা যায়।
অন্য একটি সূত্র বলছে, শামীম ইস্কান্দার যখন এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে দোড়ঝাপ করছেন ঠিক সে সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস এবং আমানউল্লাহ আমান বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা তাকে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানান। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়া শামীম ইস্কান্দারের প্রস্তাবে সায় দেয়নি বলে একাধিক বিএনপির সূত্র জানিয়েছে।