এডিটর’স মাইন্ড

বাংলাদেশে কূটনৈতিক কৌশলে ভারতের কাছে হেরে গেল চীন


প্রকাশ: 04/04/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগের বন্ধুর অভাব নেই। আন্তর্জাতিক মহলেও দলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিযোগিতা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জাপান, রাশিয়া থেকে শুরু করে ইউক্রেন সকলেই এখন বাংলাদেশের বন্ধু হতে চায়। এর একটি বড় কারণ হলো ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নতি। 

বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। এই বাজারে সকলে হিস্যা নিতে চায়। এ কারণে নির্বাচনে কী হয়েছে, না হয়েছে সে ব্যাপারে কারও মনোযোগ নেই। সবাই নতুন সরকারের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালাই করে নিতে চায়। আর এই সম্পর্ক ঝালাইয়ের সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা দেখা গেছে ভারত এবং চীনের মধ্যে। দুই দেশই অবশ্য নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পাশে ছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে যে ধরনের হস্তক্ষেপ করছিল এবং যে ধরনের মনোভাব দিচ্ছিল সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আর অন্যদিকে চীন সব সময় বলছিল যে, তারা বাংলাদেশের সরকারের পাশে আছে এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য তারা সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। 

নির্বাচনের পর এই দুই দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন মন্ত্রী এবং প্রভাবশালীদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ অব্যাহত রেখেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে যান ভারতে। আর সেই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীকে চীনে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল চীন। চীনের পক্ষ থেকে একজন উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক সফর করছিলেন বাংলাদেশ এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। চীনের রাষ্ট্রদূতও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে চীনে যায় সেজন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। 

চীন আশা করেছিল, যেহেতু ভারতের সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর হবে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সফর হবে চীন এবং এটি হবে ভারতের বিরুদ্ধে চীনের একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক বিষয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমনটি ঘটেনি। বরং প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর ভারতেই হবে বলে এখন জানা যাচ্ছে। ভারতে সামনে নির্বাচন। ৭ জুন এই নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে। নির্বাচনের ফলাফলের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত দ্বিপাক্ষিক সফর চূড়ান্ত করা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে আভাস দেওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ নানা কারণেই ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতা সবচেয়ে বড় কারণ হল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের একটি আবেগতাড়িত সম্পর্ক রয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগ সবসময় স্মরণ করে। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন সঙ্কটে ভারতই প্রথম পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারত হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। সব কিছু পাল্টানো গেলেও প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। আর এরকম বাস্তবতাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর করেছিলেন ভারতে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের সূত্র ধরেই ৭ জুনের নির্বাচনের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর সফরও ভারতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশে চীনের আরেকটি কূটনৈতিক পরাজয়। বাংলাদেশ যেমন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে তেমনি চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে চলেছে। বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক ভিত্তি তা হলো কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব। যেটি জাতির পিতা নির্ধারণ করে গেছেন। সেই নীতিতে অটল থাকছে বাংলাদেশ। কিন্তু সবকিছুর মূলে রয়েছে প্রতিবেশী প্রথম। আর সেই প্রতিবেশী প্রথম নীতিতেই ভারতেই প্রধানমন্ত্রী প্রথম সফর করবেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭