ইনসাইড ইকোনমি

সোমবার বিকেবি'র সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাকাব


প্রকাশ: 04/04/2024


Thumbnail

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এর সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। সরকারের মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক দুটির মধ্যে এ বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত বুধবার অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সোমবার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়টি বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিকেবি এবং রাকাবের একীভূতকরণের বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গতকাল বৈঠক ডাকেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ব্যাংক দুটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে ব্যাংক দুটি একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক গুলো আছে সে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রথমে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হয়েছে। এরকম আরও এক ডজন দুর্বল ব্যাংক আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সবল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। 

রাষ্ট্রপতির এক আদেশে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মূলত ফসল, মাছ প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের ঋণ দেওয়ার জন্য। যদিও ২০১০ সালে সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় ব্যাংকটি। কৃষকদের ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে পুরোদমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে কৃষি ব্যাংক। বড় ঋণপত্র খোলার মাধ্যমে সরে যায় মূল লক্ষ্য থাকে। এ কারণে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে এবং আর্থিকভাবে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ভেঙ্গে ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কৃষি ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগের শাখাগুলো নিয়ে ব্যাংকটির যাত্রা। এর মধ্যে সরকার রাজশাহী বিভাগে আটটি জেলা নিয়ে নতুন রংপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক দুটিকে একীভূত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। কৃষি ব্যাংকের মতোই ২০১০ সালে রাকাবও লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে। প্রভাবশালী কিছু গ্রাহক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ সহ বড় ঋণ নিয়ে ব্যাংকটির বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিকেবি'র পরিশোধিত মূলধন নয়শ কোটি টাকা। যদিও গত বছর ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার সাতশ ১৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ঠেকেছে ১৫ হাজার দুশত ১৫ কোটি টাকায়। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণ ২০ শতাংশ বেশি খেলাপি খাতায় নাম উঠেছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এক হাজার ৩৮ টি শাখা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের আমানত রয়েছে ৪০ হাজার সাতশ ১৯ কোটি টাকা। এই আমানত থেকে ৩২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিস্থিতি বেশ নাজুক। ৮২৪ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই ব্যাংকটি ২ হাজার সাতশ ৭২ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। ব্যাংকটির জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ৬ হাজার সাতশ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য মার্জার একুইজিশন পদ্ধতি চালু করেছে। এখানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। রাকাব-বিকেবি একীভূত হওয়ার পর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল) ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে বলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানা গেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭