ইনসাইড পলিটিক্স

এবার কি বহিষ্কার হবে ব্যারিস্টার খোকন?


প্রকাশ: 05/04/2024


Thumbnail

দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গতকাল ব্যারিস্টার খোকন আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। আর এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি সরাসরি বিএনপির সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করলেন। 

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ফোরাম জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ নির্বাচিত চার জনকে দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এরকম একটি অজুহাত দেখিয়ে পুন:নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন শুরু করার আহ্বানও জানানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সেদিকে যাননি। দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এই দায়িত্ব গ্রহণের ফলাফল কি হবে? এই জন্য তিনি দল থেকে বহিষ্কার হবেন নাকি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হয়েছে?  বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত পাওয়া গেছে।

গত কিছুদিন ধরেই বিএনপির দলের শৃঙ্খলার ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করছে। যত বড় নেতাই হোক না কেন, যেই হোন না কেন, তিনি দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন তাহলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের একটি রেওয়াজ চালু হয়েছে। এর কারণে বিএনপির বহু নেতা যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তারা কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন এবং অনেককে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, তারেক জিয়া অত্যন্ত কঠোর। তিনি দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে কোন রকম ছাড় দিতে রাজি নন। আর এই কারণেই, কত বড় নেতা বা দলের জন্য অতীতে কী অবদান ইত্যাদি দেখা হয় না। একটি অপরাধের জন্যই বড় শাস্তি পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এরকম বাস্তবতায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে তিনি হতে যাচ্ছেন পরবর্তী বলি। তাকে বিএনপি বহিষ্কার করতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপারে অন্য রকমের তথ্য পাওয়া গেছে।

একাধিক সূত্র বলছে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নিয়মিত তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বেগম খালেদা জিয়ারও আইনজীবী হিসাবে বেগম জিয়ার সঙ্গেও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের আলাদা যোগাযোগ আছে এবং এই দুজনের সম্মতি নিয়েই ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, দায়িত্ব গ্রহণের আগে তারেক জিয়ার সাথে ব্যারিস্টার খোকনের কথা হয়েছে এবং তারেক জিয়া তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য। ব্যারিস্টার খোকন এটি কৌশলগত অবস্থান বলেও মন্তব্য করেছেন। কারণ এর ফলে সুপ্রিম কোর্টে আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলা যাবে এবং বিচার বিভাগকে তাদের ভাষায় যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রতিবাদ উচ্চারণ করা সম্ভব হবে। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার সম্মতিতে ব্যারিস্টার খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির চেয়ারে বসেছেন বলে একাধিক বিএনপি সূত্র দাবি করেছে।

অন্য একটি সূত্র বলছে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক আছে। যারা এই ফোরামের নেতৃত্বে আছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলী সহ অন্যান্যরা তাদের সঙ্গে ব্যারিস্টার খোকনের পুরোনো বিরোধ রয়েছে। ব্যারিস্টার খোকন তাদেরকে নানা রকম কারণে খুব একটা পাত্তা দেন না। 

অনেকেই মনে করেন, সুপ্রিম কোর্ট যে বিএনপির হাততছাড়া হয়ে গেছে তাদের পিছনে দলের এসমস্ত সিনিয়র আইনজীবীদের ভূমিকা রয়েছে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এখন সুপ্রিম কোর্টের সভাপতি হলে প্রবীণ এসমস্ত আইনজীবীদের নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে। এরকম বিবেচনা থেকেই তারা ব্যারিস্টার খোকনকে সংকীর্ণ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সভাপতির পদ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছিলেন। এটি দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নয় বলেও বিভিন্নি সূত্র জানিয়েছে।

তবে যাই হোক না কেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন যেহেতু তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ এবং দলের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং এমনকি জনপ্রিয় বটে সে কারণে তাকে আপাতত বহিষ্কার করা নাও হতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭