ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচন যেন আওয়ামী লীগের প্রতিশোধের মঞ্চ


প্রকাশ: 05/04/2024


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কোনো মন্ত্রী-এমপি কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবে না। কাউকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা  কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করবে না এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে। আর যারা নির্বাচন করবেন তারা যেন দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করেন সে রকম ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে যেন আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ বিরোধ প্রচন্ড আকারে দানা না বাঁধে সেজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রতিদিনই বিভাগওয়ারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদেরকে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক এ সমস্ত পরামর্শ উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচন এখন যুদ্ধ মঞ্চ হিসাবে প্রস্তুত হয়েছে। 

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন দুই ধাপে ৩১২টি উপজেলার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। এই ৩১২টি উপজেলা এখন যেন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিশোধের মঞ্চ হিসেবে দেখা হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনকে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ উন্মুক্তভাবে করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। আর অন্যদিকে যারা মনোনয়ন পাননি তাদেরকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তার গঠনতন্ত্র স্থগিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। স্বতন্ত্ররা যেন সঠিক ভাবে নির্বাচন করতে পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানারকম উৎসাহ উদ্দীপনাও দেওয়া হয়েছিল এবং স্বতন্ত্রদের মাধ্যমেই নির্বাচন যেন উত্সব মুখর হয় সেটি ছিল আওয়ামী লীগের কৌশল। কিন্তু এই নির্বাচনের পর যারা হেরেছেন বা জিতেছেন, তারা এখন নতুন করে তাদের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাচনকে ব্যবহার করছেন। 

একটি উপজেলায় যিনি সংসদ সদস্য, তিনি তার নিজস্ব পছন্দের ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছেন। তার লক্ষ্য যেকোন মূল্যে তিনি তার নিজস্ব প্রার্থীকে জিতিয়ে আনবেন। এজন্য তিনি কলকাঠি নাড়ছেন। অন্যদিকে ওই আসনে যিনি পরাজিত তিনিও শক্তি পরীক্ষার জন্য নতুন করে তার পছন্দের প্রার্থীকে উপজেলায় দাঁড় করাচ্ছেন। যিনি পরাজিত হয়েছেন তিনি মনে করেন যে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তাকে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। জনগণ তাকে ভোট দেয়নি, এটা তিনি বিশ্বাস করতে রাজি নন। ফলে তিনি এবার এমপির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চান। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একজন প্রার্থী দিয়েছেন। 

আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি এরকম ব্যক্তি যিনি আশা করেছিলেন যে এবার তিনি প্রার্থী হবেন না। দল তাকে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে- এরকম প্রার্থীরাও এবার নিজস্ব উদ্যোগে উপজেলায় দাঁড়িয়েছে। ফলে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বীকার করছেন, প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে এমপি এবং স্বতন্ত্র মূল ডামি প্রার্থীর মধ্যে। এরা দুজনেই ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলোআপ নির্বাচন হিসাবে এই উপজেলা নির্বাচনকে দেখছেন। ফলে স্থানীয় এমপি তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় হোন বা স্বতন্ত্র হোন তার সঙ্গে পরাজিত এমপির এখন বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এই বিরোধ উপজেলা নির্বাচনকে সহিংসতার পথে নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমপিদেরকে বারণ করা হয়েছে তারা যেন উপজেলা নির্বাচনে ভূমিকা না রাখে। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথা এমপিরা শুনছেন না। আর এমপিরা যখন কথা শুনছেন না তখন পরাজিত প্রধান প্রদিদ্বন্দ্বীও নির্বাচনের মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন। অনেকে মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরোধী আরও তীব্র আকার ধারণ করবে এবং এই বিরোধ সামাল দেয়া জন্য আওয়ামী লীগকে অন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭